হাত রেখেই মুক্তামনির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন
বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তার হাত রেখেই চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। তবে আরো কয়েকবার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। এখনো শঙ্কা মুক্ত নয় শিশুটি। তার রক্তক্ষরণের ঝুঁকি রয়েছে।
আজ শনিবার সকাল সোয়া ৮টায় মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দ্বিতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন চিকিৎসকরা।
পরে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের তৃতীয় তলার সম্মেলন কক্ষে অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরা মুক্তামনির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন প্রতিনিধি চিকিৎসকও উপস্থিত ছিলেন।
এক সপ্তাহ আগে গত ৫ আগস্ট সকালে মুক্তামনির ডান হাতের বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার বায়োপসি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়।
তখন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন ও ইউনিটের প্রধান ডা. আবুল কালাম জানিয়েছিলেন, মুক্তামনির জীবন রক্ষার্থে যদি তার রোগাক্রান্ত হাতটি কেটে ফেলতে হয়, তবে তা-ই করবেন তাঁরা। অবশ্য হাতটি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।
আজ সকালে যখন মুক্তামনিকে ওটিতে নেওয়া হয় তখন বারান্দায় মুক্তামনির বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনরা অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরাও ছিলেন। সবারই শঙ্কা ছিল মুক্তামনির হাত নিয়ে।
অপারেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডা. সামন্ত লাল সেন ও ডা. আবুল কালাম সাংবাদিকদের জানান, সকাল পৌনে ৯টার দিকে মুক্তামনির অপারেশন শুরু হয়। টানা দুই ঘণ্টা তার অপারেশন চলে। আপাতত আমরা তার হাতটি রেখেই অস্ত্রোপচার করেছি। ডান হাতের বাড়তি মাংস কেটে ফেলা হয়েছে।
দুই চিকিৎসক জানান, এখন সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে রক্তক্ষরণ। এর ঝুঁকি আছে। অপারেশন ভালো হয়েছে। কিন্তু মুক্তমনি এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তার আরো কয়েকটি অপারেশন করার প্রয়োজন হতে পারে। অপারেশন শেষে তাকে দ্বিতীয় তলার নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রের (আইসিইউ) পাঁচ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্লাস্টিক সার্জন ও একই প্রতিষ্ঠানের অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের প্রফেসর সাজ্জাদ খন্দকার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার লেনিন উপস্থিত ছিলেন।
ডা. জুলফিকার লেনিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিশুটির চিকিৎসার সব ধরনের খবরা-খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশুটির জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।
গত মাসে সাতক্ষীরা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তামনিকে সরকারি উদ্যোগে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বহনের কথা জানান।
মুক্তামনিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমের তাঁর শরীরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেখেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারে করতে আগ্রহী নন বলে জানান। তখন ঢামেকের চিকিৎসকরাই সাহস করে মুক্তামনির অস্ত্রোপচারে এগিয়ে আসেন।
মুক্তামনি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে। তার এখন ১২ বছর বয়স। ছয় মাস বয়সে তার ডান হাতে একটি গোটা দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সেটি তার হাত থেকে বড় হয়ে যায়। ফলে চলাফেরা করতে সমস্যা দেখা দেয়। গত প্রায় তিন বছর ধরে সে বিছানায় ছিল। গণমাধ্যমে এ খবর আসার পর সবাই মুক্তামনির রোগটির ব্যাপারে জানতে পারে।