বিএনপি বসলেই মৌলবাদী, আ. লীগ বসলে প্রগতিশীল!
এ দেশের রাজনীতিতে ইসলামী শক্তি হিসেবে যাঁরা পরিচিত তাদের সঙ্গে বসলে বিএনপি সাম্প্রদায়িক দল হয়ে যায়। আর একই দলের সঙ্গে বসলে আওয়ামী লীগ প্রগতিশীল হয়ে যায়। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা এ মন্তব্য করেছেন। দলটির প্রভাবশালী এই নেতা আরো বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামীর কয়েকটা ইস্যুতে আমরা সমর্থন দেওয়ার কারণে আমরা হয়ে গেলাম কট্টর সাম্প্রদায়িক। আর প্রধানমন্ত্রী শফি হুজুরকে ডেকে আনলে তখন কিছু হয় না। এটা হলো রাজনীতি।’
‘নির্বাচন এলে আওয়ামী লীগ ইসলামের ওপর ভর করে। পোস্টারে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেত্রী হিজাব পরে আছেন। যখন দরকার ছিল তখন আওয়ামী লীগ নিজামী, মুজাহিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনাই রাজাকার মাওলানা নুরুল ইসলামকে ধর্মমন্ত্রী বানিয়ে তাঁর গাড়িতে পতাকা লাগিয়েছেন,’ বলেন খন্দকার মোশাররফ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৯৩ সাল থেকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে রাজনীতিতে আসার পর কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চারবার সংসদ নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৬২ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দির একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে এইচএসসি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আসেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এজিএস, মহসিন হলের ভিপির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে। এরপর ছয় বছর লন্ডনে উচ্চতর পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে এসে ১৯৭৫ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন একই বিভাগে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন।
১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রথম ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন খন্দকার মোশরারফ হোসেন। কুমিল্লা উত্তর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি। ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন।
সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন বিশিষ্ট এই রাজনীতিবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চন্দন সাহা রায় ও আহমেদ আল-আমীন
এনটিভি অনলাইন : সারা দেশে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : সদস্য সংগ্রহের কাজ আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ। কখনো এটা আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়, আবার কখনো দলের ভেতরেই চলতে থাকে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে এটা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করাই উদ্দেশ্য। এখন পর্যন্ত এ কর্মসূচি নিয়ে যে সাড়া পেয়েছি তা অভূতপূর্ব ও উৎসাহব্যঞ্জক। নেতাকর্মীরা তা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। প্রশ্ন আসতে পারে এই কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এত উদ্দীপনা কেন? উত্তর হচ্ছে, যেহেতু বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী সরকার, স্বাভাবিক রাজনীতির অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাই নেতাকর্মীরা সাধারণ কর্মকাণ্ডগুলো করতে পারছেন না। বৈরী পরিবেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারছিল না। তাঁরা এ কর্মসূচিকে গ্রহণ করেছেন এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। এই স্বৈরাচারী সরকার অনেক জেলায় পুলিশ দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও নীরিহ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে। আজও (৮ আগস্ট) কুমিল্লা শহরে পুলিশ আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে। তবে বাধা পেরিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এটা নিয়ে কাজ করছেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। নির্বাচন সামনে, আন্দোলন সামনে এ জন্য নেতাকর্মীরা এ কাজকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তৃণমূলে নির্বাচনী কাজ ও আন্দোলনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
এনটিভি অনলাইন : সারা দেশে কত সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিএনপি? এখন সেই সংখ্যাটা কত?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক কোটি সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন। এখন বিএনপির সদস্য সংখ্যা ৫০ লাখ। অর্থাৎ আমাদের দ্বিগুণ করতে হবে। এরই মধ্যে আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন হয়ে গেছে। আরো সময় হাতে আছে। আমরা মনে করছি, দলের সদস্য সংগ্রহের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুব কঠিন কিছু না। সর্বশেষ আমরা ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। বিএনপির ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে খারাপ ফল। তারপরও আমরা সেই ভোটে ৩৩ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছি। সেই হিসেবে এখন ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে তিন কোটির উপরে আমাদের সমর্থক আছে বলে মনে করি। সেখানে বাড়ি বাড়ি গেলে এক কোটি সদস্য সংগ্রহ অসম্ভব কিছু না। ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০০ এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০০ জন সদস্য সংগ্রহ হলেই আমাদের টার্গেট পূরণ হয়ে যাবে।
এনটিভি অনলাইন : খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছেন তিন সপ্তাহ হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা হচ্ছে…
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। এটাই উদ্দেশ্য। সেখানে তাঁর সন্তান তারেক রহমান থাকেন। তিনি দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান। খালেদা জিয়ার পর তিনি দলের শীর্ষ নেতা। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সঙ্গে আছেন দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান। তাঁরা কী আলোচনা করবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা একেবারেই অমূলক। তাঁরা দেশ, দল, সাংগঠনিক দিক নিয়ে কথা বলবেন- এটাই স্বাভাবিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেখানে চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা করাবেন। কোন চিকিৎসক কতদিনের জন্য তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন তা নির্ভর করছে ওই চিকিৎসকদের ওপর। চিকিৎসা শেষেই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু আমরা দেখছি এ নিয়েও আওয়ামী লীগ নোংরা রাজনীতি করছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলে দিলেন, খালেদা জিয়া আর আসবেন না। খালেদা জিয়া যেদিন সফরে যান, তার আগের দিন তাঁর বাসায় স্থায়ী কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে আমরা সবাই ছিলাম। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এ রকম একটা বিষয় আমরা জানলাম না, আমাদের মহাসচিব জানলেন না, কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেনে গেলেন! বিষয়টা একেবারেই হাস্যকর। তবে এটা ঠিক, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে সরকার বিব্রত এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এর আগেও খালেদা জিয়া বিদেশে গেছেন। তখন কিন্তু এরকম অস্বস্তি সরকারের মধ্যে দেখিনি। কেন এইবার সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।
এটা তো ঠিক, খালেদা জিয়া লন্ডনে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসায় রয়েছেন। সেখানে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী-সন্তানরাও রয়েছেন। খালেদা জিয়া তাঁর নাতনিদের, পুত্রবধূদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।
খালেদা জিয়া আর তারেক রহমান দলের শীর্ষ নেতা। যুক্তরাজ্য, লন্ডন ও ইউরোপের নেতারা চাইবেন তাঁদের নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। নেত্রীর কথা শুনতে চাইবেন, দলের অবস্থান জানতে চাইবেন, বৈঠক করবেন। এই তো, এর বাইরে সেখানে তাঁর করার আর কিছু নেই। নিজের স্বজনদের সঙ্গেই সময় কাটাবেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ যতটুকু খবর পেয়েছি, তিনি ভালো আছেন।
আরেকটা কথা বলা প্রয়োজন, দেখলাম অনেক পত্রিকায় এসেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ টকশোতেও বলে বেড়াচ্ছেন, নেত্রী এর সঙ্গে দেখা করেছেন, ওখানে সভা করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি- এগুলো সব ভুয়া। এর কোনো ভিত্তি নেই। আমরা জানি না সাংবাদিকরা এসব খবর কোথায় পান। বিভ্রান্তি ছাড়ানোর জন্য, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এসব করা হচ্ছে।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপি অনেকদিন আগেই বলেছিল, তাঁরা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখা দেবে। সেটি কবে নাগাদ আসতে পারে?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : খালেদা জিয়া দেশে ফিরেই ভবিষ্যত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিবেন। এটা আমাদের আগে থেকে ঘোষিত বিষয়। নেত্রী দেশে থাকা অবস্থায় বিশেষজ্ঞ দল এটা নিয়ে কাজ করেছে। নেত্রী আসার পর তা চূড়ান্ত করা হবে। পরে তা নিয়ে জনমত সৃষ্টি করা হবে। ফলে আরো জনসংযোগ কর্মসূচি আসবে সামনে।
তবে হ্যাঁ, তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক সরকার নিয়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত রায়ের পর নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে। আগে একটি রায়ে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ তা অমান্য করে নির্বাচন করেছে। এই নির্বাচন যে যথাযথ না তা প্রধান বিচারপতি তাঁর পূর্ণাঙ্গ রায়ের স্পষ্ট করে দিয়েছেন। বলা হয়েছে, এই সংসদ ডিসফাংশনাল বা অকার্যকর। ফলে এই সরকারে সবকিছু এখন প্রশ্নের সম্মুখীন।
আপিল বিভাগের রায় আইনে পরিণত হয়। আপিল বিভাগের রায়ে কার্যকর সংসদের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা আছে। এটা রায়ের কথা। এ দেশের মানুষের কথা। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এখন সরকার আপসে এ ব্যাপারে রাজি হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আমাদের নতুন করে প্রস্তাব দিতে হবে না। হ্যাঁ, প্রধান কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সমঝোতা হতে পারে। এটা নিয়ে শুধু বিএনপি না, সরকার অন্যান্য দলের সঙ্গেও বসুক। এর বাইরে গেলে সরকার রায়কে অমান্য করবে। সেরকম কিছু হলে তখন আমরা বাধ্য হব আন্দোলনের জন্য। যদি আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি, তাহলে ২০১৪ সালের উদাহরণ আছে। এ ঝুঁকি বাংলাদেশ আবার নিবে কি না সেটা হচ্ছে বিষয়।
এনটিভি অনলাইন : আওয়ামী যদি ২০১৪ সালের মতোই চিন্তা করে নির্বাচনে যায়, বিএনপি প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলোচনা যদি না হয়, তখন কী করবেন?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : সেই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাঁরা তখন বলেছিল, এটা বাধ্য হয়ে নিয়মরক্ষা ও সংবিধানরক্ষার নির্বাচন। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দেওয়া হবে। তখন আমরা একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও দেখেছি বাংলাদেশে ও অন্যান্য দেশে গিয়ে এ নির্বাচনকে বাধ্যবাধকতার নির্বাচন বলেছেন। বিএনপি সেই নির্বাচন যেহেতু শেখ হাসিনার অধীনে হবে তাই তা বর্জন করেছিল।
পরে আওয়ামী লীগ সেই অঙ্গীকার থেকে সরে যায়। কিন্তু আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের মত হবে না। জনগণের সঙ্গে বারবার প্রতারণা করা যায় না। বিদেশিরা এসেও এখন বলছে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। সবাই বলছে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আওয়ামী লীগ যদি আবারও সেই ২০১৪ সালের মতোই নির্বাচন করার দুঃসাহস দেখায়, তবুও তারা পারবে না। কেন পারবে না? সেটা এখন নয়, সংকট এলেই স্পষ্ট হবে।
এনটিভি অনলাইন : ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে বিএনপি যায়নি, সেই সংসদ মাত্র দুই বছর টিকেছিল। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ যায়নি, সংসদের পরিণতি ভালো হয়নি। ১৯৯৬ সালের উদাহরণও আমাদের কাছে আছে। অর্থাৎ বড় ও জনপ্রিয় দলগুলো নির্বাচনের বাইরে থাকলে সংসদ খুব বেশিদিন টিকে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তো সংসদ টিকে আছে। বিএনপি কি এর কোনো মূল্যায়ন করেছে?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চরিত্র। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সময় আমরা বলেছিলাম এটা সংবিধান রক্ষার নির্বাচন, নিয়মরক্ষার নির্বাচন। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল এনে পদত্যাগ করেছিলাম। এটাই আমাদের রাজনৈতিক চরিত্র। আমরা কথা দিয়ে কথা রাখি। কিন্তু আওয়ামী লীগ কথা রাখেনি। এটা তাদের রাজনৈতিক চরিত্র। এটাই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্র। তাঁরা ক্ষমতায় এলে গায়ের জোরে থাকতে চায়। ক্ষমতায় থাকার জন্যই তাঁরা সংবিধানে সংশোধনী এনে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ফলে আওয়ামী লীগের জন্য এটা নতুন কিছু না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এতে আশ্চর্য হননি।
এ প্রজন্ম যখন বাকশালের সেই রাজনৈতিক ইতিহাস পড়ে বা শোনে তখন তাঁরা যুক্তি মেলাতে পারে না। কেন দেশে শুধু একটা দল থাকবে? সরকারের নিয়ন্ত্রণে চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে? বাকশাল ছিল এ দেশের গণতন্ত্রের ওপর প্রথম বড় আঘাত। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগই টুটি চেঁপে হত্যা করেছে। গণতন্ত্রের নামে বাকশাল চালু রেখেছে। সেই একনায়কত্বই এখন অলিখিতভাবে চালু রেখেছে।
এনটিভি অনলাইন : নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। বিএনপিও হয়তো সেই সংলাপে যাবে। বিএনপি নির্বাচন কমিশনে কী কী বিষয় তুলে ধরবে?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : এরই মধ্যে আমাদের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। সীমানা নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে আমরা হয়তো আরপিও সংশোধনের কথা বলব।
নির্বাচন কমিশন এরই একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্বাচনকালীন সময়ে দলীয় সরকার থাকলে তা সুষ্ঠু হবে না, যত ভালো ধারাই নির্বাচন কমিশনে যুক্ত করা হোক না কেন। মনে করেন, নির্বাচন হচ্ছে একটি গাড়ির মতো। গাড়িটি ভালো হতে পারে, সেটি এয়ার কন্ডিশনড হতে পারে, তার সবকিছুই ভালো। কিন্তু গাড়ি চালানোর রাস্তাই যদি না থাকে, তাহলে ভালো গাড়ি দিয়ে আপনি কী করবেন? নির্বাচনের সেই রাস্তা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। সেটিই তো নেই।
আগের নির্বাচন কমিশনও রোডম্যাপ দিয়ে নির্বাচন করেছে। ভোটের জন্য কত স্বচ্ছ আয়োজনের কথাই না তখন তাঁরা বলেছে! কিন্তু সেই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোনো ভোট হয়নি। তাহলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম কি ১৫৩ আসনে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে? আসলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে স্বাধীন। তাদের লোকবল নেই, যা দিয়ে ভোট পরিচালিত করতে পারবে। নির্বাচন করে সরকারি কর্মকর্তা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও তাঁরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা আজকে আর সেই অবস্থানে নেই। নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে সরকারের কর্মকর্তারা সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবে। সরকারের মন্ত্রীরা প্রটোকল পাবে। আর বাকি যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাঁরা কোনো সুবিধা পাবে না। এভাবে তো হতে পারে না। এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও না। কিন্তু আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক আর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্য সবার জন্যই সমান সুযোগ চাই। আমরা নির্বাচন কমিশনে সেসব কথাই তুলে ধরব, এরই বাইরেও কিছু থাকবে।
এনটিভি অনলাইন : ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ে ‘রাজনীতিতে ব্যক্তিবাদ’, সামরিক শাসন, ‘অপরিপক্ব সংসদ’, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। বিএনপি এ দেশের একটি বড় ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এর দায় কি তাঁরাও এড়াতে পারে?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ছিলাম। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসেনি। আমরা দায়িত্ব নিয়েছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করানোর। সেটি আমরা করেছি। আমরা কথা রেখেছি। ২০১৪ সালের ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী।
এনটিভি অনলাইন : সার্বিকভাবে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন তো বেড়েছে। ভালো মানুষ রাজনীতিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। রাজনীতির নেতিবাচক ব্যবহারের ফলে সমাজে হানাহানি বেড়েছে। এটা তো অস্বীকার করা যাবে না।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপারটি বাড়বে যখন দেশে গণতন্ত্র থাকবে না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী চরিত্র ধারণ করার পরপরই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে। সরকারের জনভিত্তি যদি না থাকে এবং তারা যদি জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে তাদের নানা অন্যায্য পথ অবলম্বন করতে হয়। সেটিই এখন করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাত বছরের শাসনের পর আপিল বিভাগ এ রকম একটি রায় দিয়েছেন। সাত বছর আগের অবস্থার জন্য তো এরকম রায়ের প্রয়োজন হয় নাই। আপিল বিভাগের রায়ও বলছে অবক্ষয়ের কথা। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপি অভিযোগ করছে যে, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে কি সেই অবস্থার আদৌ কোনো পরিবর্তন ঘটবে বা সেটা সম্ভব?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বিএনপি ক্ষমতায় এলে কী করবে সেটা এখন বিচার্য বিষয় নয়। আমাদের স্টাডি মোতাবেক জনগণ আমাদের চায়। বিএনপিকে তাঁরা সরকারে দেখতে চায়। আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তবে তা আমাদের জন্য প্রথম আসা হবে না। ক্ষমতায় এলে আমরা কী করতে পারি তার পরীক্ষা জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। খালেদা জিয়া তিনবার দিয়েছেন। বিএনপি সরকার কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো চালিয়েছে তার রেকর্ড আছে। আমরা কিন্তু বিনা টেন্ডারে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে দেইনি। বড় বড় সেতুর কাজ বিনা টেন্ডারে দেইনি। আমরা বিচার ছেড়ে দিতে চাই জনগণের কাছে। আর সেই ভয়টাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের। কারণ জনগণ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে তাঁরা আওয়ামী লীগের এই অবিচারের বিচার করবে। আমাদের সময় বাংলাদেশ এশিয়ার রাইজিং টাইগার হিসেবে প্রশংসা পেয়েছিল। এখন বাংলাদেশ পরিচিত লুটেরাদের দেশ হিসেবে। জনগণের কাছে আমরা পরিষ্কার, আমরা বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করিনি।
এনটিভি অনলাইন : বিকল্পধারার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাসদের আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের ড. কামাল হোসেন একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। আপনারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছেন, তাঁদের অবস্থানও সরকারের বিরুদ্ধেই। বিএনপির সঙ্গে কি তাদের কোনো যোগাযোগ বা কথাবার্তা হয়েছে?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোট আছে। আমাদের জোট আছে। বামপন্থিরা নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। ইসলামি দলগুলো জোট করার চেষ্টা করছে। রাজনীতি থাকলে দল থাকবে। জোটও করতে পারে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একটি আলাদা আলাদা আদর্শ ও অবস্থান আছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সবার চিন্তা আছে। যারা যে দলে বা জোটেই থাকুক না কেন- আগামী নির্বাচনে মূলত সবাই দুটি জোটে চলে যাবে। একটি হচ্ছে শেখ হাসিনার অধীনে কারা নির্বাচনে যাবে, আরেকটি পক্ষ হয়ে যাবে কারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যাবে। এ দুই বিভাজন হবে। তখন বোঝা যাবে কার অবস্থান কোথায়? তবে জোট করা ইতিবাচক বলে মনে করি আমি। জোটের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই এখানে আছে। নানা ফর্মেই আছে। দল বা জোট গণতন্ত্রের জন্য ভালো।
এনটিভি অনলাইন : বিএনপির জোটে জামায়াতে ইসলামী আছে। দলটির স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে নানা সমালোচনা আছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কারণে এখন তাঁরা কিছুটা নীরব। জামায়াত সম্পর্কে বিএনপির মূল্যায়নে ভিন্নতা কিছু আছে কী?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমাদের ঘোষিত ২০ দলীয় জোটের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ছিল, আছে। ভবিষ্যতে তাদের ভূমিকা কী হবে এটা তারা বলতে পারবে। এখন তারা চুপ আছে। দল হিসেবে নির্বাচনের কমিশনের নিবন্ধন তাদের নেই। ফলে ভবিষ্যতে কী হবে এখনি বলা যাবে না।
আরেকটা কথা, ইসলামিক বলেই কিন্তু সবাইকে স্বাধীনতাবিরোধী বলা যাবে না। জামায়াতে ইসলামীতে স্বাধীনতাবিরোধী যারা ছিল, সরকার তাদের ফাঁসি দিয়ে সেই অধ্যায় শেষ করে দিয়েছে। এখন যারা আছে তাদের জন্ম স্বাধীনতার পরে। তাদের কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী বলা যাবে? সেটা কে নির্ণয় করবে। সেটা জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
এখন দেখা যায়, ইসলামী শক্তি হিসেবে যারা পরিচিত তাদের সঙ্গে বিএনপি বসলে, বিএনপি সাম্প্রদায়িক দল হয়ে যায়। আর একই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বসলে আওয়ামী লীগ প্রগতিশীল হয়ে যায়। হেফাজতে ইসলামীর কয়েকটা ইস্যুতে আমরা সমর্থন দেওয়ার কারণে আমরা হয়ে গেলাম কট্টর সাম্প্রদায়িক। আর প্রধানমন্ত্রী শফি হুজুরকে ডেকে আনলে তখন কিছু হয় না। এটা হলো রাজনীতি। নির্বাচন এলে আওয়ামী লীগ ইসলামের ওপর ভর করে। পোস্টারে দেখা যায় আওয়ামী লীগের নেত্রী হিজাব পরে আছেন। যখন দরকার ছিল তখন আওয়ামী লীগ নিজামী, মুজাহিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনাই রাজাকারের গাড়িতে পতাকা লাগিয়েছেন।
এনটিভি অনলাইন : আপনি নিজে ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত মত কী?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন, এটা অনস্বীকার্য। সারা পৃথিবীতে বলা হচ্ছে, কয়লা হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ উৎস। যত দূর সম্ভব তা এড়ানো উচিত। বিকল্প বের করে সারা পৃথিবী তা পরিহার করছে। রামপালে যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাঁরা ভারতেই দুইবার ব্যর্থ হয়েছে একই ধরনের প্রকল্প করতে। ভারতের মানুষ তাদের সেই সুযোগ দেয়নি, কিন্তু আমরা দিয়েছি। দেওয়া হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ এলাকায়। এই যে প্রকল্প হচ্ছে, এর ধোঁয়া যতই উপরে যাক, এর কণা তো মাটিতে পড়বে। এর বাতাসে সুন্দরবন আক্রান্ত হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্য জায়গায় করা যায়, কিন্তু সুন্দরবন তো অন্য জায়গায় করা যাবে না। সুন্দরবন একবার ধ্বংস হয়ে গেলে আর করা যাবে না। ফলে এটা সুন্দরবন এলাকা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় করা উচিত।
এনটিভি অনলাইন : বলা হয়, রাজনীতিতে ভালো মানুষ আর আসছে না। আপনি শিক্ষকতা থেকে রাজনীতিতে এসেছেন। কেন ভালো মানুষ আজকার আর রাজনীতিতে আসছে না?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : এটা ঠিক, সার্বিকভাবে রাজনীতিতে যাদের আসা উচিত তাদের সংখ্যা কমে গেছে। তা অস্বীকার করতে পারব না। স্বাধীনতার পর আমরা দেশে নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। পাকিস্তান আমলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল। আমি প্রথম বর্ষেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সলিমুল্লাহ হলে এজিএস নির্বাচিত হই। পরে মহসিন হলের ভিপি হয়েছি। আমাদের সময় ছাত্রনেতা হওয়ার অন্যতম যোগ্যতাই ছিল ভালো ছাত্র হওয়া। এখন নির্বাচন নেই। বেশ বড় একটা সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন নেই। মানুষ রাজনীতিতে আসার কথা ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে। সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছাত্র সংগঠনের মূল দল থেকে যাদের মনে করা হয়, তাদের ছাত্রনেতা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে কাউকে তো তৃণমূল থেকে উঠে আসতে হচ্ছে না, নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে আসতে হচ্ছে না। কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই, পড়াশোনা ছাড়াই তাঁরা ছাত্রনেতা হয়ে যাচ্ছেন।
সব দলই আজ এটা করছে। এতে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, এখনো এ দেশের বড় দুটি দলে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, নীতি-নির্ধারকের ভূমিকা পালন করছে তাদের প্রায় সবাই ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে এসেছে। এই জায়গায় শূন্যতা তৈরি হচ্ছে।
আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে টার্গেট হলো সংসদীয় আসন। আর সেখানে বিবেচিত হয় টাকা। ব্যবসায়ীরা যত সামনে আসছে তত রাজনীতিতে ব্যবসা বাড়ছে। আমার প্রতিপক্ষ যখন টাকাওয়ালা লোককে মনোনয়ন দেয়, তখন সিটের স্বার্থে আমাদেরও তাই করতে হয়। ফলে কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সবাইকে এক হয়ে পরিবর্তনটা আনতে হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।