মুক্তামনির ফের অস্ত্রোপচার আগামী সপ্তাহে
বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মেয়ে মুক্তামনির ডান হাতে আগামী সপ্তাহে আবার অস্ত্রোপচার করা হবে। এখন পর্যন্ত সে সুস্থ আছে।
আজ রোববার সকালে এনটিভি অনলাইনকে মুক্তামনির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মুক্তামনি এখন ভালো আছে। আজ আমি নিজেই ড্রেসিং করেছি। এখন একটা অস্ত্রোপচারের কথা চিন্তা করছি। হাতে চামড়া লাগাতে হবে। সেটা কত দ্রুত করা যায়। আবার মেডিকেল বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেব। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পরবর্তী অস্ত্রোপচার হবে।’
মুক্তামনি এখন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) চিকিৎসাধীন।
সামন্ত লাল সেন আরো বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে আমরা আশা করছি অস্ত্রোপচার করব। এর আগে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রক্তক্ষরণের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এখন ভালো আছে।’
সিঙ্গাপুরের হাসপাতাল ওই অস্ত্রোপচার নিয়ে আগ্রহ না দেখোলেও বার্ন ইউনিটের চ্যালেঞ্জ নেওয়া প্রসঙ্গে সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন ভালো কাজ হয়। এটা গর্বের বিষয়। আমার বিশ্বাস, আমাদের দেশের তরুণ চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা পেলে ভালো কাজ করতে পারবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মুক্তামনি আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবস্থা নিতে বলেন। এরপর সিঙ্গাপুরে যোগাযোগ করি। কিন্তু সেখান থেকে বলা হয়, এটা অস্ত্রোপচারযোগ্য নয়। কিন্তু আমরা করেছি। এখন পর্যন্ত ও ভালো আছে।’
মুক্তামনি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে। তার এখন ১২ বছর বয়স। সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনির বয়স যখন দেড় বছর, তখন ডান হাতে একটি টিউমারের মতো হয়। পরে তা ফুলে যেতে থাকে। পরে পুরো ডান হাতটি ফুলে বালিশের মতো হয়ে যায়। ওই হাত থেকে দুর্গন্ধও বের হতে থাকে। রোগটি তার বুক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। গত তিন বছর ধরে সে বিছানায় ছিল।
গত ১১ জুলাই মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুক্তামনির জন্য গঠিত আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড জানায়, মুক্তামনি বিরল রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম ‘হাইপারকেরাটোসিস’।
গত মাসে সাতক্ষীরা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তামনিকে সরকারি উদ্যোগে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বহনের কথা জানান।
মুক্তামনিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁর শরীরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেখেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারে করতে আগ্রহী নন বলে জানান। তখন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরাই সাহস করে মুক্তামনির অস্ত্রোপচারে এগিয়ে আসেন।
এরপর গত ৫ আগস্ট মুক্তামনির ডান হাতের বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়। ৮ আগস্ট মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার বায়োপসি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১২ আগস্ট মুক্তামনির অস্ত্রোপচার অনুষ্ঠিত হয়।