শোলাকিয়া ঈদ জামাতে লাখো মুসল্লি
লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে প্রতিবারের মতো এবারও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এবারের জামাতে প্রায় তিন লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ। ১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতের হিসেবে শোলাকিয়া ময়দানের এবারের জামাতটি ছিল ১৮৮তম ঈদ জামাত।
জামাত পরিচালনা করেন ইদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির তথা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তিু ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ দেশদরদী রাজনীতিকদের জন্য আল্লাহ রহমত কামনা করেন এবং সেই সাথে যেসব রাজনীতিক মানুষকে পুড়িয়ে মারাসহ বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আল্লাহর হেদায়েত কামনা করেন। সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী নেতারাসহ সব স্তরের মানুষ জামাতে অংশগ্রহণ করেন।
দেশের সর্ববৃহৎ এ জামাতে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহের উদ্দেশে। ঈদগাহমুখী মুসল্লিদের দখলে চলে যাওয়ায় এ সময় কয়েক ঘণ্টার জন্য আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঈদ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামের দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয় সরকারিভাবে। এর একটি ট্রেন ভোর সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও বিপুল মুসল্লি জামাতে অংশগ্রহণের জন্য একদিন আগে থেকেই কিশোরগঞ্জ এসে শোলাকিয়া ময়দানসহ পার্শ্ববর্তী মসজিদ ও গেস্ট হাউসগুলোতে অবস্থান নেন। জামাতে বিদেশ থেকে আগত কয়েকজন মুসল্লিকেও অংশ নিতে দেখা যায়।
জামাত শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রায় সাত একর আয়তন বিশিষ্ট বিশাল ঈদগাহ ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। জায়গা না পেয়ে বিপুল মুসল্লি ময়দানের বাইরের বিরাট এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সড়কে ও বাড়িঘড়ের আঙিনায় অবস্থান নিয়ে নামাজ আদায় করেন। এরপরও স্থান সংকুলান না হওয়ায় অসংখ্য মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেননি।
মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও একটি মিনিট আগে একটি শটগানের গুলি ছোড়া হয়।
শান্তিুপূর্ণভাবে জামাত সম্পন্ন করতে নেওয়া হয় চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষে ঈদগাহ মাঠ ও আশপাশে দায়িত্ব পালন করে সহস্রাধিক পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠের ২৮টি প্রবেশ মুখে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশি করা হয় এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল স্কাউট সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।