সাত খুন মামলায় এখনো পলাতক যারা
নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার আপিলের রায়ে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এদের মধ্যে র্যাবের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, এম এম রানা, আরিফ হোসেন এবং সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন রয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া বাকি ১১ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
পলাতক আসামি সাত
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল জনান, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, আল আমিন শরিফ, মো. তাজুল ইসলাম এখনও পলাতক রয়েছে।
এ ছাড়া যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে মো. সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত করপোরাল মো. মোখলেছুর রহমান, এএসআই মো. কামাল হোসাইন পলাতক।
ফাঁসি বহাল যাদের
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১১-এর চাকরিচ্যুত অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, চাকরিচ্যুত কমান্ডার এম এম রানা, চাকরিচ্যুত মেজর আরিফ হোসেন, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, এবি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, সৈনিক বেলাল হোসেন, সৈনিক আল আমীন, আবু তৈয়ব আলী, মো. শিহাবউদ্দিন, পূর্ণেন্দু বালা, আবদুল আলিম, মনিরুদ্দিন মুন্সী ও তাজুল ইসলামের ফাঁসি বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
মৃত্যুদণ্ড কমে যাবজ্জীবন হলো যাদের
আসাদুজ্জামান নূর, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তজা জামান চার্চিল, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাজাহান ও জামাল সরদারের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
নিম্ন আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত নয়জনের সাজা বহাল থাকা আসামিরা হলেন- করপোরাল রুহুল আমিন ১০ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ ১০ বছর, এএসআই বজলুর রহমান ৭ বছর, হাবিলদার নাসির উদ্দিন ৭ বছর, সৈনিক নুরুজ্জামান ১০ বছর, কনস্টেবল বাবুল হাসান ১০ বছর, কর্পোরাল মো. মোখলেছুর রহমান (পলাতক)অপহরণের দায়ে ১০ বছর, এএসআই (পলাতক) কামাল হোসেন অপহরণের দায়ে ১০ বছর, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান অপহরণের দায়ে ১০ বছর এবং আলামত সরানোর দায়ে ৭ বছরসহ মোট সতের বছর দণ্ড।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বিউটি। তিনি বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। এ রায় যেন আপিল বিভাগে বহাল থাকে এবং দ্রুত কার্যকর করা হয়।’ নিহত নজরুলের শ্বশুর মামলা বাদী শহীদ চেয়ারম্যানও সন্তোষ প্রকাশ করেন।
গত ১৬ জানুয়ারি সাত খুনের দুই মামলায় মোট ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন কারাবন্দি। এদের মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দেন। এ মামলায় ১০৬ সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
তবে তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনায় তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে তার গাড়িচালক মিজানুর রহমান দীপু জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে নাসিকের (নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন)কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র্যাব-১১।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল পৃথক দুটি মামলা করেন।