গউছের ওপর হামলার ‘কারণ’ জানাল আ. লীগ
হবিগঞ্জ পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কারাবন্দি জি কে গউছের ওপর হামলার কারণ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে দলের নেতারা অভিযোগ করেন, জি কে গউছ কারাগারে বসে অর্থমন্ত্রী ও স্থানীয় একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন।
ওই অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আজ রোববার বিকেলে পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে তাঁরা এমন ‘অভিযোগ’ পেয়ে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন।
আওয়ামী লীগের অভিযোগ শুনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগ শুনে আমরা হতবাক। আওয়ামী লীগ এই হামলার ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করবে এটা আমরা আশা করিনি।’
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ প্রমুখ। সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে।
সভার সভাপতি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর টিটো আজ রাতে এনটিভি অনলাইনের কাছে অভিযোগ করেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি, জি কে গউছ কারাগারে বসে কারাবন্দি খুনের আসামি ইলিয়াস মিয়াকে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন। ঈদের দিন শনিবার এ নিয়ে কারাগারে ঝগড়ার একপর্যায়ে নাকি আসামি ইলিয়াস মেয়র জি কে গউছকে রড দিয়ে আঘাত করেন।’ তিনি এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের একটি কথা শুনেছি। তবে আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। যদি জি কে গাউস এ ধরনের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিচার হোক। আর কেউ যদি তাঁর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে এ অভিযোগ করে থাকে তাহলে তদন্তসাপেক্ষে তাঁরও বিচার হোক।’
জি কে গউছের ওপর হামলা ও তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগের সত্যতা জানতে জেলা পুলিশ ও কারা পুলিশের কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গতকাল জি কে গউছের ওপর হামলার পর হবিগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার শামীম ইকবাল এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে কারাগারের ভেতরে ঈদের জামাত শেষে বের হওয়ার পরপরই এক আসামি তাঁকে আঘাত করে। এতে তাঁর শরীর থেকে রক্ত বের হতে থাকলে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক আনা হয়। তাঁকে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
ওই আসামির সঙ্গে ঝগড়ার কারণে জি কে গউছের ওপর হামলা হয়েছে এমন কথা কারা কর্তৃপক্ষের কেউ বলেনি।
যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কারাগারে জি কে গউছের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কারাগারে কয়েদিদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সরকার মেয়র জি কে গউছের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, এটা তাদের ব্যর্থতা।’
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি জি কে গউছের ওপর ঈদের দিন সকালে হামলা চালায় অপর এক কারাবন্দি। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে তাঁকে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
জি কে গউছের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকে আজ রোববার হবিগঞ্জে আধাবেলা হরতাল পালিত হয়েছে।