‘জানি না এ জীবনে হজে যাওয়া হবে কি না’
হজ করার জন্য দুই বছর ধরে চেষ্টা করছেন রাজশাহীর মোহনপুর থানার আবদুল গনি সরকার। গোল্ডেন ট্রাভেলস এজেন্সি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে টাকাও জমা দিয়েছেন তিন বছর আগে। প্রথম বছরেই হজের সার্বিক খরচ বাবদ দুই লাখ ৩৬ হাজার টাকা জমা নিয়ে নেয় তারা।
এজেন্সির কথা মতো বাড়ির লোকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি হজে যাওয়ার উদ্দেশে বিমান বন্দরে আসেন গনি সরকার। প্রথমবার দুই দিন অপেক্ষা করে তিনি বাড়ি ফিরে যান। দ্বিতীয় বার অর্থাৎ গত বছর একইভাবে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যান। একেক দিন যায় আর নানা অজুহাতে কখনো পাঁচ হাজার কখনো ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায় ওই এজেন্সি। কিন্তু বিমানে চড়ার শুভক্ষণটি আর আসেনি।
এবার আর আসার আগে কাউকে বলে আসেননি গনি সরকার। তিনি বলেন, ‘জানি না আমার এ জীবনে হজে যাওয়া হবে কি না।’
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর হজ ক্যাম্পে অবস্থান করা আবদুল গনি সরকার এনটিভি অনলাইনের কাছে এভাবেই তাঁর বিড়ম্বনার কথা জানান।
গনি সরকার বলেন, ‘যার কাছে টাকা দিয়েছি সেই লোক শুনলাম এখানেই কোথায় যেন বাড়ি করেছে। তার ফোন অনেক দিন ধরেই বন্ধ। মাঝেমধ্যে তার ছেলেপেলেরা ফোন করে নানা অজুহাত দেখিয়ে টাকা চায়। টাকার অঙ্কটা বড় নয় বলে এখনো দিয়ে যাচ্ছি। তবুও যদি হজটা পালন করে মরতে পারতাম।’
দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে একটু থেমে বলেন, ‘বাটপারির একটা জায়গা থাকে। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ নিয়েও বাটপারি করা যায়? আল্লাহ ওদের ক্ষমা করবে তো?’
তাঁর পাশেই বসা একই এলাকার ছয়জন বৃদ্ধ। তাঁদের বিড়ম্বনাও প্রায় এক। কথা বলে জানা যায়, তাঁরাও একই এজেন্সিতে টাকা জমা দিয়েছেন। গত ২২ আগস্ট তাঁরা এক সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন। কথা ছিল সে রাতেই ফ্লাইট হবে। কিন্তু এখন না তখন এভাবে ছয়দিন পার হতে চলল, তবুও কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলেনি। এঁদের একজন নূর আলী মণ্ডল। তাঁর ভাষ্য, ‘আজ রোববার বিকেলে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হলো যেন আমরা প্রত্যেকে আরো দেড় লাখ করে টাকা জমা দেই।’
‘আসলে টাকা দিতে আমাদের আপত্তি নেই। বিড়ম্বনায় যেহেতু পড়েছি এর শেষ দেখে যেতে চাই। কিন্তু ভরসা পাই কই? কাল সোমবার হজে যাওয়ার শেষ দিন। এখনো যাওয়ার মতো কোনো পরিবেশ দেখছি না। জানি না কী অপরাধ করেছিলাম, যে কারণে পবিত্র ভূমিতে যাওয়ার ভাগ্যটা হচ্ছে না।’ বলেন নূর আলী মণ্ডল।
দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার অধিকার নেই তাই যেতে পারলাম না। দেখেন না স্বাস্থ্য-চেহারা কী খারাপ! এই চেহারায় কী হজ্জে যাওয়া যায়! কাল হয়তো কেউ ফোন করে বলবে এইবার রাষ্ট্রীয় সমস্যার কারণে হলো না আগামীবার যেভাবেই হোক যাওয়ার ব্যবস্থা করব। এই আশায় থাকতে থাকতে হয়তো মরে যাব, হজটা আর করা হবে না।’
খুব ক্লান্ত অবস্থায় নিজের ইচ্ছেয় কথা বলতে আসেন কোরবান আলী। তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুই বলার নেই। শুধু বলি, আল্লাহ এদের হেফাজত কর, ওদের জ্ঞান দাও, মানুষকে তাঁর প্রিয় হাবীবের মাজার জিয়ারত করার সুযোগ করে দাও।’
এ বিষয়ে হজ্জ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাঁদের নিবন্ধন দেখে হজ ক্যাম্পে অবস্থান করতে দিয়েছি। তাঁদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনছি। কিন্তু নিজের বোকামির কারণে প্রতারিত হলে সরকার বা হজ ক্যাম্পের পক্ষ থেকে কী করার আছে বলুন। একান্ত পরিচিত না হলে কেন তাঁরা টাকা জমা দিতে গেলেন? বয়স্ক মানুষগুলো হয়রানি দেখে আমাদেরও ভীষণ খারাপ লাগছে কিন্তু কী করি বলুন?’