রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দুর্ভোগ চরমে
ঈদ এলেই মানুষের বাড়ি ফেরা সহজ করতে সড়ক-মহাসড়ক প্রস্তুতের তোড়জোড় থাকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিটি করপোরেশনগুলোর। তবে এবারের ঈদে দৃশ্যত তেমন তোড়জোড় নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাস্তায় কোনো সংকট নেই বললেও বাস্তব চিত্রটা উল্টো। নগরীর অধিকাংশ সড়কেরই অবস্থা এখনো বেহাল। এতে এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ সড়কে রয়েছে ছোট-বড় গর্ত। সেখানে গাড়ি চলে ধীরগতিতে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে যাত্রীদের। একই সমস্যা রয়েছে ঢাকার অদূরে সিলেট-নরসিংদী সড়কে। সেখানে রাস্তা মেরামতের কাজ চলায় স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলতে পারছে না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়ত কাজ চলছে। কিন্তু স্বল্পসংখ্যক লোক কাজ করায় এই দৃশ্যপট বদলাচ্ছে না।
রাজধানীর নাবিস্কো থেকে টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড হয়ে মহাখালী কাঁচাবাজার পর্যন্ত সড়কে ছোট-বড় গর্ত থাকায় সেখানে গাড়ি চলে ধীরগতিতে। এই সড়কে দিনভরই যানজট লেগে থাকে।
মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পাশের চা বিক্রেতা আক্কাস মোল্লার ভাষ্য, এক বছর ধরে রাস্তার এই অবস্থা। কিন্তু এখানে কাউকে কাজ করতে দেখা যায়নি।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, শনির আখড়া, রায়েরবাজার, ডেমরা-দনিয়া, নন্দীপাড়া, বাসাবো, রামপুরার অধিকাংশ সড়ক প্রায় অচল হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, ছয় মাস ধরে এসব সড়কের দৃশ্যপট পরিবর্তন দেখছেন না তাঁরা।
দনিয়া এলাকার নাট্যকর্মী শাহ নেওয়াজ বলেন, এত লোকের বাস এখানে। তবুও যেন সরকার ফিরে তাকাচ্ছেন না। এলাকার প্রতিটি রাস্তার অবস্থা শোচনীয়।
রাজধানীর রোকেয়া সরণি মেট্রোরেল এবং মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ এলাকায় রাস্তায় ফ্লাইওভারের কাজ চলায় ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলে রয়েছে সীমাহীন বিড়ম্বনা। রাস্তার এই অবস্থার কারণে অফিসগামী অনেক মানুষ এখন অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন।
মালিবাগ রেলগেট থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা নাজেহাল। এই পথের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। রাস্তার এ অবস্থার কারণে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। ছুটির দিনগুলো ছাড়া অন্য দিনে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে এই যানজট।
নতুন বাজারে একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করেন নিক্সন। তিনি বাসাবো থেকে নতুন বাজারে যেতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হন। ছয় মাস ধরে চলছে তাঁর এই রুটিন।
রাজধানীর দক্ষিণখানের অবস্থা আরো ভয়াবহ। দক্ষিণখানের আদর্শ ইউনিয়নের প্রায় সব সড়কই অচল। রিকশা-ভ্যান ছাড়া ওই রাস্তা দিয়ে অন্য গাড়ি চলা প্রায় অসম্ভব। ফলে সাড়ে পাঁচ লাখের মতো কর্মব্যস্ত মানুষ আছেন দুর্ভোগে।
দক্ষিণখানের বাসিন্দা মুদি দোকানদার আলম বেপারী বলেন, ‘এই এলাকায় না থাকলেই নয়, শুধু এমন মানুষগুলোই এখানে থাকেন। না হয় এখানে থাকা যায়, সে পরিবেশ আছে?’
অন্যদিকে সড়ক উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কের অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।
আজ মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ীতে মহাসড়কের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘মহাসড়কে কোনো দুর্ভোগ নেই।’
ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলের কাজ চলায় রাজধানীর ভেতরে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, সেতুমন্ত্রী এর নাম দিয়েছেন উন্নয়নের যন্ত্রণা। তবে এই সংকট খুব বেশিদিন থাকবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার এ সমস্যায় কথা বলতে নারাজ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের দুজন কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। অনেক রাঘববোয়াল আছে, যারা এই কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।