রাজন হত্যার কথা স্বীকার করে ময়নার জবানবন্দী
সিলেটে ১৩ বছরের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি চৌকিদার ময়না মিয়া আদালতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন।
আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ময়নাকে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে হাজির করে। ময়না আদালতে রাজন হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা জবানবন্দী গ্রহণ শেষে ময়না মিয়াকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, গত ১৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে ময়না মিয়াকে সিলেট শহরতলীর টুকেরবাজার এলাকা থেকে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরের দিন আদালতে হাজির করলে আদালত তাঁর সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে অন্য কারা, কীভাবে জড়িত ছিল তার বিস্তারিত তথ্য দেন। তাঁর জবানবন্দী আজ আদালতে রেকর্ড করা হয়।
চৌকিদার ময়না মিয়া গত ৮ জুলাই সকাল ৭টার দিকে শিশু রাজনকে রাস্তা থেকে আটক করে প্রথমে কুমারগাঁওয়ে একটি ওয়ার্কশপের খুঁটিতে বেঁধে রাখেন। পরে কামরুলসহ খুনিরা তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার জানান, চৌকিদার ময়না মিয়া আদালতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন- যা এই মামলার তদন্তে অনেকখানি সহায়তা করবে।
গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় নির্যাতনের ভিডিওচিত্রও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করেন সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুহিত আলমকে। পরে মুহিতকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় মুহিত, তাঁর ভাই কামরুল ইসলাম, আলী হায়দার ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন রাজনের বাবা।
গত ১৩ জুলাই পুলিশ মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগম ও আত্মীয় ইসমাইল হোসেন আবলুসকে পৃথক স্থান থেকে আটক করে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরে লিপিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তিন নম্বর আসামি কামরুল সৌদি আরবে পালিয়ে গেলে ১৩ জুলাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় তাঁকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে সেখানকার পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া রাজন হত্যাকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে দুই প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলীকে ১৪ জুলাই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে সিলেট শহরতলির টুকেরবাজার এলাকা থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৫ জুলাই দুপুরে শহরতলির শেখপাড়া থেকে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আরেক আসামি দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার শুরুতে দুলালের নাম এজাহারে না থাকলেও রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে এজাহারে নাম অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ। রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণকারী নূর আহমেদকে ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় শহরতলির জাঙ্গাইল গ্রামের স্বজনরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরের দিন ১৬ জুলাই সকালে আসামি আলী হায়দারকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের লোকজন।