রাজন হত্যা মামলায় মুহিতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার এক নম্বর আসামি মুহিত আলম। আজ বুধবার বেলা ৩টায় সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক আনোয়ারুল হকের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার জানান, জবানবন্দিতে মুহিত আলম রাজন হত্যাকাণ্ডে নিজের এবং কামরুলসহ অন্যদের অংশগ্রহণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
এর আগে মুহিতকে গত ১৩ জুলাই থেকে প্রথম দফায় পাঁচদিন এবং দ্বিতীয় দফায় সাতদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মুহিতকে নিয়ে রাজন হত্যা মামলায় মোট ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন। এর মধ্যে আসামি দুলাল আহমদ ও নূর আহমেদ গত মঙ্গলবার এবং চৌকিদার ময়না মিয়া গত সোমবার জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া রাজন হত্যার দুই প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলী গত ১৪ জুলাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় নির্যাতনের ভিডিওচিত্রও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করেন সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুহিত আলমকে। পরে মুহিতকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় মুহিত, তাঁর ভাই কামরুল ইসলাম, আলী হায়দার ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন রাজনের বাবা।
গত ১৩ জুলাই পুলিশ মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগম ও আত্মীয় ইসমাইল হোসেন আবলুসকে পৃথক স্থান থেকে আটক করে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরে লিপিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তিন নম্বর আসামি কামরুল সৌদি আরবে পালিয়ে গেলে ১৩ জুলাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় তাঁকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে সেখানকার পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া রাজন হত্যাকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে দুই প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলীকে ১৪ জুলাই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে সিলেট শহরতলির টুকেরবাজার এলাকা থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৫ জুলাই দুপুরে শহরতলির শেখপাড়া থেকে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আরেক আসামি দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার শুরুতে দুলালের নাম এজাহারে না থাকলেও রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে এজাহারে নাম অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ। রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণকারী নূর আহমেদকে ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় শহরতলির জাঙ্গাইল গ্রামের স্বজনরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরের দিন ১৬ জুলাই সকালে আসামি আলী হায়দারকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের লোকজন।