খাবারের জন্য শিশুর পথ চেয়ে থাকেন মা!
আনোয়ারা বেগমের দুই ছেলেমেয়ে। ছেলে আমির হাকিমের বয়স আট ও মেয়ে জমিলার বয়স ছয় বছর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অল্প করে ভাত খেয়েছে তারা। ভাতের সঙ্গে ছিল আলুর ঝোল। দুপুরে কী খাবে, তা জানেন না আনোয়ারা। কারণ, তাঁর কাছে কিছু নেই।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পের কাছে পথে ছিলেন আনোয়ারা বেগম। স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে বলিবাজার এলাকা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। কুতুপালং থেকে টেকনাফের দিকে যেতেই হাতের বামে পাহাড়ে কিছু অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। এরই একটির নাম পাহাড়পুর।
সেখানে কালো পলিথিনের নিচে ঠাঁই হয়েছে তাঁর পরিবারের। আনোয়ারা জানালেন টাকাপয়সা যা এনেছিলেন, তা শেষ। ঠিক এ সময়ে বাংলাদেশি পাঁচ টাকা আছে তাঁর হাতে। ১০ দিন আগে বাংলাদেশে আসার পর খরচ হয়ে যায় সব টাকা।
এখন কীভাবে খাওয়া-দাওয়া করছেন? আনোয়ারা জানালেন, স্বামী আর দুই শিশু সারা দিন রাস্তায় কাটায়। বিশেষ করে তাঁর দুই সন্তান সারা দিন রাস্তায় ত্রাণের গাড়ির পেছনে ছুটে বেড়ায়। সড়কে কেউ ত্রাণ দেয়, কেউ টাকা দেয়। আমির হাকিম ও জমিলা টাকা ও ত্রাণ যতটুকু সংগ্রহ করতে পারে, তা নিয়ে আসে। সকালে চাল আর আলুর জোগানটা দুই শিশুই দিয়েছে। ছোট একটা ত্রাণের ব্যাগ পায় দুই ভাইবোন। এর মধ্যে কিছু চাল আর কিছু আলু ছিল। কালো ছোট ঘরের নিচে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আনোয়ারা। বলিবাজার এলাকায় জমি ছিল তাঁর।
আনোয়ারা জানান, মিয়ানমারের সেনারা তাঁর ঘর জ্বালিয়ে দেয়। দুই শিশুকে বাঁচাতে দ্রুত দেশত্যাগ করেন। মিয়ানমারে সেনারা নির্বিচারে গুলি করে। এমনকি গ্রামের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার যায়। যাওয়ার সময় বোমা মারে। নারীদের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। দেশ ছাড়ার পর যতই সময় গেছে, হাতে থাকা টাকা শেষ হয়েছে। এখন দুই শিশুই তাঁর পরিবারের খাবার জোগাড় করে দেওয়ার অন্যতম ভরসা। টেকনাফ সড়কে কিছুক্ষণ পর পর ত্রাণবাহী গাড়ি আসে। আমির ও জমিলা দৌড়ে যায়। যা পায় তাই দ্রুত নিয়ে আসে আনোয়ারার কাছে।
এক বেলা খাওয়ার পর অন্য বেলায় কী ব্যবস্থা, তা বলতে পারেন না আনোয়ারা।