গণমাধ্যম প্রধানমন্ত্রীকে মানবিক বলে, সু চির সঙ্গে তুলনা করে বিএনপি
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের সহায়তা করায় গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবিক নেত্রী বললেও বিএনপি তাঁকে মিয়ানমারের কার্যত নেতা অং সান সুচির সঙ্গে তুলনা করছে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে সাবেক কর কমিশনার ও মুক্তিযোদ্ধা এস এম জাহাঙ্গীরের চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
‘লন্ডনের একটি নামকরা টেলিভিশনে মাদার অব হিউম্যানিটি (মানবতার মা) খেতাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করে নিউজ প্রচার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে একটি দল (বিএনপি) আছে যারা অং সান সু চির সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দাঁড় করিয়েছে। চিন্তা করে দেখেন ওরা কত নোংরা। এদের চিন্তা চেতনা কত নিচু’, বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
‘আমাদের দেশের কিছু লোক আছে যাদের দল নাই, দলহীন তারা সুযোগ পেলে সরকারে বিপক্ষে এবং বিএনপির পক্ষে দাঁড়ায়। তারা বলে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা তেমন না। আরে কূটনৈতিক তৎপরতা না থাকলে তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের নিন্দা করল কীভাবে। তারা (ই্ইউ) বলেছে, তারা (মিয়ানমার) একদিকে বাণিজ্যিক সুবিধা নিবে, অন্যদিকে গণহত্যা করবে, তা হতে পারে না। এই মিয়ানমারের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব এখন গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে’, যোগ করেন তোফায়েল।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৬ কোটি দেশের মানুষ, অতি ঘনবসতিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের হৃদয় আছে। আমাদের মন আছে। এসব দেখে আমাদের একাত্তরের স্মৃতি ভেসে ওঠে। কীভাবে আমাদের মা-বোন সেদিন ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সুতরাং আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকেই মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে এদের আমরা আজকের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মনে করি অনতিবিলম্বে সে গণহত্যা বন্ধ করা উচিত।’
‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আজ ধিক্কার দিচ্ছে। এটা হতে পারে না। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধ যুবক, নারী পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, বিলম্বে হলেও প্রধানমন্ত্রীর বোধোদয় হয়েছে, অর্থাৎ তিনি যে কক্সবাজার গেলেন। বিজিবিকে তারা যে মিয়ানমারের গৃহহারা মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এ নির্দেশ তো প্রধানমন্ত্রীর। তার নির্দেশেই তো আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।’
খালেদা জিয়া নিখোঁজ আছেন মন্তব্য করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এসেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছে। জাতিসংঘে আজ এটা আলোচনা হবে। গতকাল পেপারে দেখলাম জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, কেউ তার ভেটো প্রদান করেনি। কিন্তু কোথায় খালেদা জিয়া? আপনারা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বোধোদয় হয়েছে?’
‘প্রধানমন্ত্রী কী না করেছেন? মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছে, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া নিখোঁজ। তিনি হারিয়ে গেছেন। তিনি লন্ডনে বসে টুইটারে একটা বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর এমন কী রোগ, যে কারণে দেশে আসতে পারছেন না? মানবিক গুণাবলি থাকলে তিনি সব কিছু ত্যাগ করে এখানে এসে সেই গৃহহারা সর্বহারা মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব ইব্রাহিম খান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বে করেন।
মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত ইব্রাহিম হোসেনের চারটি বই হলো বঙ্গবন্ধুর মর্মকথা (২ খণ্ড), আর্থ সামাজিক উন্নয়নে জ্বালানি খাতের ভূমিকা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, সমসাময়িক সাধারণ জ্ঞান ও চলমান অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য।