অবিরাম বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারে হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের এখন নতুন ভোগান্তির নাম বৃষ্টি। কক্সবাজার জেলায় শনিবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সবখানে। যাদের কপাল ভালো, তাদের জুটেছে তাঁবুতে সামান্য আশ্রয়। বাকিদের ভরসা একটি ছাতা বা গাছতলা। অনেকের কপালে আবার তাও নেই।
অপ্রতুল ত্রাণ ও খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি এখন বাড়তি যোগ হয়েছে বৈরী আবহাওয়া। শনিবারের তীব্র গরম আর রাত থেকে ভারি বৃষ্টির কারণে এখন চরম ভোগান্তিতে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এর ফলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে রোগ-বালাই।
এদিকে অনেক কষ্টে জোগাড় হওয়া মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নেয় বৃষ্টি। তাই বাধ্য হয়ে বাক্স-পেটরা নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকির মাঝেই নতুন আশ্রয়ের খোঁজে ছোটেন উখিয়া উপজেলার বালুখালীর অস্থায়ী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা বাসিন্দারা।
কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ জানান, তাদের আশ্রয়স্থল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে যাচ্ছেন।
বৃষ্টির কারণে সরকারি মেডিকেল ক্যাম্পে ভিড় করছেন ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত রোহিঙ্গারা। এ ছাড়াও শনিবার থেকে উখিয়ার ২৪টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আশা করছি আমরা আগামী সাত দিনের মধ্যে এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারব। আশা করছি সব বাচ্চাকে ভ্যাক্সিন দিয়ে নিরাপদ করতে পারব।’
এত ভোগান্তির মধ্যেও একটু ত্রাণের জন্য সংগ্রাম করতে দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের। বিভিন্ন সংগঠন ও দলের বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ দেওয়া থামাতে কেন্দ্রীয়ভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করছে জেলা প্রশাসন।
উখিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরুদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সবাই ত্রাণ পায় এবং সুর্নির্দিষ্টভাবে বিক্ষিপ্তভাবে না দিয়ে ওই নির্ধানিত জায়গায় ত্রাণটা দেয়। তাতে করে রাস্তার আশেপাশে যেসব রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দুই হাজার একর প্রস্তাবিত জায়গার মধ্যে ঢুকে যায়। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’
সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত, লঘুচাপ সৃষ্টি
উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘু চাপের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এটি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোসগরে ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোসাগরে মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।
আবহওয়ার পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়নমনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় চট্টগ্রামে, ১০৪ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কক্সবাজার জেলায় ১০২ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।