প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এটা বিচার বিভাগের জন্য নজিরবিহীন ঘটনা।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে জয়নুল এ কথা বলেন। বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের নিয়ে পুনরায় বৈঠক করবে আইনজীবী সমিতি।
সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আজ সভায় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আইনজীবী সমিতি যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে ১৪ জন সদস্যের মধ্যে ১৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।’
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশের পর থেকে মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি। জাতীয় সংসদেও তাঁর সমালোচনা করা হয়। এর মধ্যেই গত ১০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে ছুটিতে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন।
গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটি চান। বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘গতকাল আমরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। জানতে চাইছিলাম কোনো চাপে, কোনো কারণে তিনি ছুটিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন কি না। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেন নাই। তিনি সকালে এসে দুপুর ১টার সময় ছুটির দরখাস্ত দিয়ে কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। অথচ তিনি এর আগে আমাদের চিঠি দিয়ে বলেছেন, আদালত খোলার দিন তিনি আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অতীতের রেকর্ড বলে, কোনো প্রধান বিচারপতি দাওয়াত দিয়ে এভাবে ছুটি নিয়ে চলে যান নাই। অথচ সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম এভাবে দাওয়াত করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি হুইল চেয়ারে করে এসে আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।’
‘এই প্রধান বিচারপতি এমন কী করেছেন যে তিনি ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। তার ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করা হয়েছে, যাতে তিনি ছুটি নিয়ে চলে যান। দেশ জানে, জাতি জানে, সারা পৃথিবী জানে, একটি রায়ের পর সরকার তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। যাতে তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি ছুটিতে যাননি, ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যেতে তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে।’
জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, এ জন্য তাঁর সঙ্গে দেখা করে জানার অধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি, এ জন্য বিকেল ৩টায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করব। আইনজীবীরা আজ আমাদের কাছে জানতে চান, তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে সাক্ষাৎ করা প্রয়োজন। আজ যদি মানুষ ছুটির কারণ জানতে না পারে, তাহলে জাতির জন্য সেটা দুঃখজনক হবে।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক মাসের ছুটির পর সোমবার দিবাগত রাতে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের চলমান অবকাশকালীন ছুটির পর সৌজন্য সাক্ষাতের আয়োজন চলছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা চলমান অবকাশকালীন ছুটির পর প্রথম কার্যদিবস ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মূল ভবনের ভেতরে লনে অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এবং আইনজীবীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।