প্রধান বিচারপতি গৃহবন্দি নন, বাসায় চিকিৎসাধীন
ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে ‘আক্রোশমূলকভাবে প্রচণ্ড চাপের’ মুখে ছুটিতে পাঠিয়ে ‘বাসায় বন্দি’ করে রাখার যে অভিযোগ উঠেছে, তা উড়িয়ে দিয়েছে সরকার।
এস কে সিনহার ছুটি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই আজ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘অসুস্থতার বিষয়ে কারো হাত নেই। তিনি (প্রধান বিচারপতি) সেদিন (সোমবার) সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। নিজের খাসকামরায় বসে ছুটির দরখাস্ত লিখেছেন।’
এ সময় আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির রাষ্ট্রপতির কাছে করা ছুটির আবেদনপত্র সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে বলেন, ‘দেখেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন। এখন নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। তাঁর বিশ্রাম প্রয়োজন। বাসায় তিনি আছেন। আমার জানামতে চিকিৎসকরা তাঁকে দেখছেন।’
দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কক্ষে আইনমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্যের পরই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘অ্যাবসলিউটলি না।’
এরপর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, প্রধান বিচারপতি জটিল রোগে আক্রান্ত, তাহলে বাসায় কেন?
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার জানা মতে, চিকিৎসকরা তাঁকে দেখছেন।’
সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কি প্রধান বিচারপতিকে দেখতে গিয়েছেন? প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, তিনি নিজে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর নিজেও তাঁকে দেখতে যাবেন।
প্রধান বিচারপতির এই ছুটি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একপর্যায়ে বলেন, ‘আমি তো দেখছি, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ হয়ে আমাদের বিপদে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর অসুস্থতার জন্য আমাদের জবাব দিতে হচ্ছে।’
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশের পর থেকে মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি। জাতীয় সংসদেও তাঁর সমালোচনা করা হয়।
এর মধ্যেই গত ১০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে ছুটিতে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। গত সোমবার প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটি চান। ‘প্রচণ্ড চাপের মুখে’ প্রধান বিচারপতি ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও গতকাল মঙ্গলবার বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দাবি করেছেন।
ছুটির দরখাস্তের পর সোমবার দিবাগত রাতেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। তিনি গতকাল সকাল থেকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা বিচারপতি আবদুল আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে নিয়েও প্রশ্ন করেন। আইনমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, বিচারপতি ওয়াহহাব বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করেছিলেন, আবার আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। তিনি কীভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পেলেন?
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বিতর্কিত হলেও সাংবিধানিক কারণেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হয়েছেন।’
প্রধান বিচারপতি যদি আর কাজে না ফেরেন বা তিনি যদি পদত্যাগ করেন- তাহলে জোর করে ছুটিতে পাঠানোর যে অভিযোগ আসছে, তাই কি সত্য বলে প্রমাণিত হবে না?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই ধারণা পোষণ করতে চাই না, আমি এই ধারণায় যেতে চাই না।’
‘আসুন আমরা সবাই মিলে তাঁর জন্য দোয়া করি, তাঁর সুস্থতা কামনা করি’, যোগ করেন আইনমন্ত্রী।