বাস্তুচ্যুতদের রাখাইনে ফিরে যাওয়াই সমাধান : সুষমা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন চায় ভারত। আর দেশটি মনে করে ওই এলাকায় দ্রুত উন্নয়নই রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করতে পারে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার ব্যাপারে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ ভারত।
আজ রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের এসব বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন সুষমা স্বরাজ। রাজধানীর একটি হোটেলে বিকেল ৪টায় ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সুষমা স্বরাজ ও এ এইচ মাহমুদ আলী। তবে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন গ্রহণ করা হয়নি।
নিজের বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি সুষমা স্বরাজ। তিনি ‘বাস্তুচ্যুত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি স্পষ্ট যে বাস্তুচ্যুত মানুষদের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে শুরুতেই সুষমা বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য গত সেপ্টেম্বরে আমরা শুরু করি অপারেশন ইনসানিয়াত।’
সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে দ্রুত আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ওই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, আর এটাই হবে সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।’ তিনি জানান, এরই অংশ হিসেবে কিছু প্রকল্পে রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা করবে ভারত।
রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন বাস্তবায়নের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা জানান সুষমা স্বরাজ।
সুষমা স্বরাজ জানান, প্রায় তিন লাখ ‘বাস্তুচ্যুত’ মানুষকে চাল,ডাল, চিনি, লবণ, তেল, চা, দুধ, মশার কয়েল এবং সাবান দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের কাছে এসব সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নিজের বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আজ রোববার দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে তাঁকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি।
এ ছাড়া আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সুষমার বৈঠক করার কথা আছে। পরে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতের অর্থ ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিষয়কমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। প্রতিদিন নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে ভিড় করছে রোহিঙ্গা সদস্যরা। গত সাত সপ্তাহে এ নিয়ে এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের’ উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা ব্যক্ত করেছে। এমনকি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে চীন, রাশিয়া, ভারত মিয়ানমারকে সমর্থন জানিয়েছে। ‘জাতিসংঘ নিধন’ বা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করার ঘটনায় এই তিন দেশ নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি।