খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিন নাকচ, ৯ নভেম্বর শুনানি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে তৃতীয় দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ নভেম্বর।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ আদালতে পৌঁছান। আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর তাঁর আইনজীবীরা স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। পরে এই আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। শেষে বিচারক স্থায়ী জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে মামলার আগামী শুনানির দিন পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন।
আজ খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ দুটি মামলার নয়জনের পুনর্জেরা ও দুজনের জেরা-সংক্রান্ত এবং মামলাটি স্থগিত চেয়ে করা আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে আদালতকে অবহিত করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়। কিন্তু ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার সেই আবেদনও নামঞ্জুর করে দেন।
এরপর দুপুর ১টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি ১৫ মিনিটের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার পর মুলতবি প্রার্থনা করেন।
এর আগে গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে দ্বিতীয় দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর পর আদালত মামলার শুনানির জন্য আজ দিন দেন।
গত ১৯ অক্টোবর দুই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিশেষ আদালতে প্রথম বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া। ওই দিন জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে এক লাখ টাকার মুচলেকায় জামিন পান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন। বড় ছেলে ও দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ সময়ই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া বাসে পেট্রলবোমা হামলা মামলায় গত ৯ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন বেগম। আর ১২ অক্টোবর মানহানির মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নবী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
বিএনপি মনে করে, রাজনৈতিক কারণেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যদিও সরকার বলেছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আদালতের ব্যাপার।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।