প্রধান বিচারপতি ফিরবেন কি না ‘কেউ জানে না’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার এক মাসের ছুটি আগামীকাল শুক্রবার শেষ হচ্ছে। ছুটি শেষে তিনি দেশে ফিরবেন কি না অথবা ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন কি না, এ বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনটিভি অনলাইনকে জানানো হয়েছে, কেউ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেন ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো খোঁজ খবর নেই। প্রধান বিচারপতি ছুটির মেয়াদ বাড়াবেন কিনা এ বিষয়েও তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানান তাঁরা।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তিনি কোথায় কীভাবে আছেন জানি না।’ ফিরে এলে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা তাঁর সঙ্গে বসতে চান না। তাহলে তিনি কীভাবে বসবেন? আমি আবারও বলছি প্রধান বিচারপতির ফিরে আসা এবং বসা সুদূরপরাহত।’
গত ১৩ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে একাই দেশত্যাগ করেন। তাঁর ছুটি ১০ নভেম্বর শেষ হচ্ছে।
গত ২ অক্টোবর হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। তিনি আবেদনে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান রাষ্ট্রপতিকে। পরে ৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি অসুস্থ, এটি নিয়ে রাজনীতির কিছু নেই। আসুন আমরা সবাই মিলে প্রধান বিচারপতির সুস্থতায় দোয়া করি।’
এরপর ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে একটি চিঠি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ১৩ অক্টোবর অথবা এর নিকটবর্তী তারিখে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধান বিচারপতি। ১০ নভেম্বর অথবা এর নিকটবর্তী তারিখে বিদেশ থেকে ফিরবেন। পরে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ১১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি ছুটির মেয়াদ ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে জিও (সরকারি আদেশ) জারি করা হয়।
এরপর ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি রাজধানীর হেয়ার রোডে তাঁর বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। বিচার বিভাগের স্বার্থে আবার ফিরে আসব। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটি মহল প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন।’ তিনি একটি লিখিত বিবৃতিও সাংবাদিকদের দিয়ে যান। পরের দিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে চাননি আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এর পর ১৭ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটের ফ্লাইটে প্রধান বিচারপতির স্ত্রী সুষমা সিনহাও অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
গত ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থি আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগেরও দাবি তোলেন।