মামলা চলবে, খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
গ্যাটকো মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুটি রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বিচারিক আদালতে মামলাটি চলতে বাধা থাকল না। আজ বুধবার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
একই সঙ্গে আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং গ্যাটকো মামলার বাতিলে রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল উপস্থিত ছিলেন। দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মো. খুরশিদ আলম খান।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘একই ধরনের ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর মামলা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলা বাতিল না করে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আমরা আপিল করব। আশা করি আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন।’
দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘এই মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিলেন, এই রায়ের ফলে তা বাতিল হয়ে গেল। আগামী মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
এর আগে এ মামলা গত ১৭ জুন শুনানি শেষে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। গত ২ আগস্ট এ বেঞ্চের কার্যতালিকায় এলে রায় ঘোষণার জন্য ৫ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়।
গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী।
গত ১৯ এপ্রিল গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি পেছাতে খালেদার চারটি সময়ের আবেদন খারিজ করে প্রথমে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি নেওয়া শুরু করেছিলেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে বিচারপতি জাফর আহমেদের পরিবর্তে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল নিষ্পত্তি করতে বিচারপতি আবদুর রবকে এ বেঞ্চে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা এ মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর স্থগিত ছিল। এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তাঁর ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়। ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়া ও সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুদক আইন ও জরুরি বিধিমালায় অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ ও মামলা দায়ের এবং মামলা চালানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। এসব আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন। পরে বেশ কয়েক দফায় মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বাড়ান আদালত।
এদিকে, গত ১৮ জুন নাইকো দুর্নীতি মামলার রুলের রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ। মামলাটি বাতিলে খালেদা জিয়ার রিট আবেদন ও এ-সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায়ে বলা হয়, নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলবে বিচারিক আদালতে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে।