আদালত অবমাননায় দণ্ড ভোগ করলেন জনকণ্ঠ সম্পাদক
প্রধান বিচারপতি ও অন্য এক বিচারপতির মোবাইলে কথোপকথনের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আদালত অবমাননার দায়ে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ও জরিমানা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
urgentPhoto
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
রায়ে বলা হয়, আদালত অবমাননার অভিযোগে মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও স্বদেশ রায় আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন পর্যন্ত এজলাস কক্ষে বন্দি হিসেবে অবস্থান করবেন। এটা তাঁদের সাজা হিসেবে গণ্য হবে। একই সঙ্গে দুজনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। জরিমানার টাকা যেকোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দিতে বলা হয়।
রায় ঘোষণার পরপর আপিল বিভাগে বসে থাকেন দুই সাংবাদিক। শুরু হয় দুই সাংবাদিকের দণ্ডভোগ। দুপুর ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ সময় পর্যন্ত দুই সাংবাদিক বিচার কক্ষে বসে থাকেন। এ সময় তাঁরা উভয়ে পাঞ্জাবি পরা ছিলেন। বেলা ১১টায় আদালতের কার্যক্রম ৩০ মিনিটের জন্য বিরতি দিলে তাঁরা দুজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে এজলাস কক্ষের বাইরে গিয়ে শৌচাগারে যান। পুনরায় সাড়ে ১১টায় আদালত শুরু হওয়ার পর তাঁরা আদালতে প্রবেশ করেন এবং দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত এজলাস কক্ষে বসে দণ্ড ভোগ করেন। এ সময় আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও স্বদেশ রায় এজলাস কক্ষের মাঝামাঝি বেঞ্চে বসে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে জনকণ্ঠের অর্ধশতাধিক সাংবাদিকও এজলাস কক্ষে বসে থাকেন। তাঁরা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও স্বদেশ রায়ের সঙ্গে কথা বলে সময় পার করেন। দুপুর সোয়া ১টায় দণ্ড শেষে এজলাস কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন দুই সাংবাদিক। আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে বেরিয়ে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ বলেন, ‘রায় গ্রহণ করে মেনে নিয়েছি, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’ এর আগে রায়কে কেন্দ্র করে দুই সাংবাদিক সকাল পৌনে ৯টায় আদালতের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন। আদালতে আসার সময় তাঁরা একটি করে ব্যাগ নিয়ে আসেন, এর মধ্যে ফতুয়া, লুঙ্গি, জিন্স প্যান্ট, গেঞ্জি ছিল। আপিল বিভাগ সাধারণত সকাল ৯টায় বসলেও আজ সকাল ১০টায় এজলাসে আসেন বিচারপতিরা। এর পর রায় পড়া শুরু করেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘সংবিধানে ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তা নিরঙ্কুশ নয়, আইন দ্বারা নির্ধারিত। সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতার ব্যবহার অবধারিত করা যাবে না এবং সংকুচিতও করা যাবে না। জনকণ্ঠ বিচারকদের প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বিচার বিভাগ সম্পর্কে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এটা আদালত অবমাননার শামিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা ইচ্ছা করলে আদালত অবমাননার অভিযোগে দণ্ড দিতে পারবেন।’
আদালতে দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন দোলন ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৬ জুলাই জনকণ্ঠের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। বিচারাধীন বিষয়ে লেখা প্রকাশ করায় ২৩ জুলাই মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও স্বদেশ রায়কে তলব করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে জনকণ্ঠের এ দুই সাংবাদিককে কেন দণ্ড দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেন আদালত।