গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয় শিশু রত্নাকে
কথায় কথায় গৃহকর্তার পরিবারের সদস্যরা মারধর করত গৃহকর্মী রত্না বেগমকে (১১)। কিছুদিন আগে সামান্য কাজের ভুলে গৃহকর্তা একদিন গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেন রত্নার শরীর। আজ শুক্রবার মিষ্টি চুরি করে খাওয়ার অপবাদ দিয়ে গৃহকর্তার স্ত্রী রুটি তৈরির বেলনা দিয়ে বেদম মারধর করেন তাকে। নির্যাতন সইতে না পেরে চিৎকার শুরু করলে তাকে আটকে রাখা হয় একটি ঘরে।
পরে রত্নার কান্নার শব্দ পেয়ে প্রতিবেশীরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে দুপুরে গৃহকর্তা জিল্লুর রহমানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে সটকে পড়েন জিল্লুরের স্ত্রী রীতা খাতুন। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে বিকেলে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
আটক জিল্লুর রহমান ঠাকুরগাঁওয়ের ‘মানবকল্যাণ’ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী নগরীর ভদ্রা এলাকায় ওই এনজিওর শাখা কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। জিল্লুর পরিবার নিয়ে পবা উপজেলার কাটাখালী এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সেই বাড়িতেই শিশুটিকে নির্যাতন করা হয়।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার থানায় রত্না বেগম সাংবাদিকদের জানায়, তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। বাবার নাম আবদুর রহিম। তারা চার বোন। সে মেজো। বাড়িতে থাকতে স্কুলে যেত সে। সেখান থেকে ছয় বছর আগে এনজিওকর্মী জিল্লুর তাকে বাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে আসেন। কাজের বিনিময়ে তাকে থাকা-খাওয়ার বাইরে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো।
আজকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গৃহকর্মী রত্না জানায়, সকাল ১০টার দিকে মিষ্টি চুরি করে খাওয়ার অপবাদ দিয়ে গৃহকর্ত্রী রীতা খাতুন তাকে রুটি তৈরির বেলনা দিয়ে পিটিয়েছে। এ সময় চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে তাকে চড়-থাপড় দেন। চুল ধরে তুলে আছাড়ও দেন। একপর্যায়ে তাকে বাড়ির একটি কক্ষের ভেতরে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়।
এরপর কান্নার শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা গিয়ে রত্নাকে উদ্ধার করে। দুই মাস আগে জিল্লুর রহমান গৃহকর্মীকে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেন। এতে তার গা পুড়ে যায়। কিছুদিন আগে সেই ঘা শুকিয়েছে।
জামা তুললে দেখা যায়, রত্নার শরীরে এখনো সেই নির্যাতনের চিহ্ন রয়ে গেছে। সে জানায়, প্রায়ই তাকে পরিবারের সদস্যরা বেদম মারধর করত।
শিশুটিকে মারার ব্যাপারে থানায় আটক জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা সামান্য ব্যাপার। এ নিয়ে আবার সাংবাদিক কেন?’
পবা উপজেলার কাটাখালী এলাকার জিল্লুর রহমান ও রীতা খাতুন দম্পতির প্রতিবেশীরা সাংবাদিকদের জানান, ওই বাসার ভেতর প্রায়ই শিশু রত্নার কান্নার শব্দ তাঁরা শুনতে পেতেন। ‘আপনার পা ধরি খালু, আর মাইরেন না’-এমন আর্তনাদ ভেসে আসত।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, রত্না বেগমের বাবাকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি এলে থানায় মামলা হবে।