দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের ফুলহারা আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাচীর ও দুটি কক্ষের দরজা ভাঙার অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ছাত্রলীগের ওই নেতা আজ বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এক সহকারী শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন।
গ্রেপ্তার শহিদুজ্জামান রাজীব (২৭) মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তাঁর বাড়ি ফুলহারা গ্রামে।
ফুলহারা আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, রাজীবের বাড়ি বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে। বিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা যাতায়াতের সময় ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের মধ্যে প্রায় ২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ইটের প্রাচীর নির্মাণ করে। এতে বিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে রাজীবের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা বিদ্যালয়ের পাশের অপর একটি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে থাকেন। এ নিয়ে রাজীবের সঙ্গে শিক্ষকদের বিরোধের সৃষ্টি হয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তার জানান, গত শনিবার রাজীব বিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে রাস্তা বের করতে প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্রীদের কমন রুম ও অষ্টম শ্রেণির কক্ষের দরজাও ভেঙে পাশে ফেলে রাখেন। এ ঘটনায় পরের দিন রাজীবের বিরুদ্ধে ঘিওর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। এতে রাজীব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ অবস্থায় আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় চলার সময়ে বারান্দার ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাজীব। এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন প্রধান শিক্ষক। একপর্যায়ে রাজীব মোটরসাইকেল দিয়ে প্রধান শিক্ষককে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চলে যান। প্রধান শিক্ষক সরে গিয়ে অক্ষত থাকেন। ভিডিও ধারণ করা হয়েছে শুনে একটু পরই রাজীব বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ করতে থাকেন। রাজীবের সঙ্গে তাঁর মা ও বোনও এসে গালিগালাজ করেন শিক্ষকদের। এ সময় সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম এগিয়ে এলে রাজীব তাঁকে লাঞ্ছিত করে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যান।
এদিকে, এ ঘটনা জানাতে প্রধান শিক্ষক ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবা আইরিনের কার্যালয়ে যান। এরপর শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ইউএনওর কাছে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়।
রাজীব সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার সময় শিক্ষকরা তাঁকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
ঘিওরের ইউএনও মাহবুবা আইরিন জানান, শিক্ষকদের কাছ থেকে এ ঘটনা শুনে দ্রুত পুলিশকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম জানান, রাজীবকে বিদ্যালয়ের প্রাচীর ও দরজা ভাঙার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় থানায় আরো একটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।