‘মুক্তামনির পরিবার ভেবেছিল আর লাভ হবে না’
রক্তনালিতে টিউমারের মতো বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামনি আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বুধবার সকাল সোয়া ৮টায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জটিল ও বিরল রোগী মুক্তামনির চিকিৎসা চলছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে। ছয় মাসের অধিক সময় ধরে মুক্তামনির চিকিৎসার প্রধান চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছিলেন বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী সামন্তলাল সেন।
মুক্তামনির মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রথিতযশা এই চিকিৎসক শোকাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি সকালে এনটিভি অনলাইনকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘মেয়েটা কয়কেদিন ধরে অসুস্থ ছিল। বাড়িতে চলে গিয়েছিল। আমি কথা বলেছিলাম নিয়ে আসার জন্য। তবে তারা আসেনি।’
‘তারা ভেবেছে, রোজার সময় ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসা- বেশ ঝামেলার। আর কোনো লাভ হবে না। গ্রামের মানুষ তাই বুঝতে পারেনি।’
সামন্তলাল সেন বলেন, ‘আমি সাতক্ষীরা থেকে সিভিল সার্জন, ডাক্তার পাঠিয়েছিলাম মুক্তামনির বাড়িতে। অ্যাম্বুলেন্সও গিয়েছিল। মেয়েটা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। আজ সকাল সোয়া ৮টায় মারা যায়। আমি এ ঘটনায় গভীরভাবে শোক প্রকাশ ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমাবেদনা জানাচ্ছি।’
পরিবারের সদস্যরা জানায়, কয়েকদিন ধরেই মুক্তামনির শরীর ভালো যাচ্ছিল না। হাতের তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণায় নির্জীব হয়ে পড়ছিল সে। টানা ছয় মাসের উন্নত চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মুক্তামনির ক্ষতস্থানে ফের পচন ধরে। ডান হাতের ক্ষত স্থানের পচা জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছিল ছোট-ছোট পোকাও।
পরিবার জানায়, জন্মের দেড় বছর পর মুক্তামনির দেহে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও কোনো চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত হাতটি গাছের গুঁড়ির আকার ধারণ করে প্রচণ্ড ভারি হয়ে ওঠে। এক সময় এতে পচন ধরে, পোকাও জন্মায়। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকত মুক্তামনি। বিকট দুর্গন্ধের কারণে আত্মীয়স্বজন ও পড়শিদের যাতায়াতও এক রকম বন্ধ হয়ে যায়।
অনেক ডাক্তার ও হাসপাতালে মুক্তামনির চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো মুক্তার করুণ চিত্র তুলে ধরে। পরে সরকারি উদ্যোগে মুক্তামনিকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।