ভোটের প্রস্তুতি দেখতে গাজীপুরে সিইসি
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা এখন গাজীপুরে। আজ মঙ্গলবার রাতে তাঁরা গাজীপুর সার্কিট হাউজে থাকবেন।
কাল বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন সিইসি কে এম নুরুল হুদাসহ অন্য কমিশনাররা। পরে তাঁরা দুপুরে শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে প্রতিদ্বন্দ্বী সব মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন।
গাজীপুরের নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) কুদরত-ই-খুদা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে কমিশনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, আগামী ২১ ও ২২ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রায় ৯ হাজার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা এবং ২৪ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫০৩ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে ৪২৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা (এর ৫ শতাংশ রিজার্ভ), ২ হাজার ৭৬১টি ভোটকক্ষের জন্য ২ হাজার ৭৬১ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা (এর ৫ শতাংশ রিজার্ভ), প্রতিটি ভোট কক্ষে দুজন করে মোট ৫ হাজার ৫২২ জন পোলিং অফিসারসহ (এর ৫ শতাংশ রিজার্ভ) প্রায় ৯ হাজার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এসব প্রশিক্ষণ চলবে। জেলা শহরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হাইস্কুল, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট হাইস্কুল, প্রগতি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ব্রি), জয়দেবপুর সরকারি গার্লস হাইস্কুল ও রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের হলরুমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এছাড়াও গত ৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে যেসব কাজ শেষ হয়েছিল স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর তার অধিকাংশ কার্যক্রম পুনরায় করতে হচ্ছে। যেমন ভোটকেন্দ্র ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি প্রদান, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনায় আচরণবিধি প্রতিপালনের চিঠি প্রদান, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগপত্র পুনরায় তৈরিকরণ ইত্যাদি। এতে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শ্রম ও ব্যয় বেড়ে গেছে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো- চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটার ২৪৮০), চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয় (ভোটার ২৫৫২), পশ্চিম জয়দেবপুরের মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার ২৫৬২), মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার ২৮২৭), রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার-১৯২৭) এবং রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২০৭৭)। এ কেন্দ্রগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর ওই এলাকার ভোটারদের নিয়ে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মহড়া দেওয়া হবে। এছাড়া গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্র, কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার বসির উদ্দিন উদয়ন একাডেমি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৩১ মার্চ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী সব ধরনের কার্যক্রম। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন। শুনানি শেষে ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীরা আজ ১৮ জুন থেকে এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ছয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।