পুলিশি শক্তি ব্যবহারে সহিংসতা বাড়বে : অ্যামনেস্টি
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ায় সহিংসতা আরো বাড়বে বলে মনে করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি বলছে, গত বুধবার দেওয়া এক ভাষণে দেশটির সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা চলমান সহিংসতা বন্ধে পুলিশ বাহিনীকে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ দেশকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে ফেলে দেবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশবিষয়ক গবেষক আব্বাস ফয়েজ মনে করেন, এ নির্দেশের ফলে পুলিশ বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অহেতুক ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করবে। এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও ঘটতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাম্প্রতিক অভিযানে ১২ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১২ থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাকে পুলিশ নাম দিয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’।
পুলিশের অভিযানে চলা এসব মৃত্যুর কোনো কোনোটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এসবের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়ে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন আব্বাস ফয়েজ। তাঁর মতে, পুলিশের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু তার মানে এই নয়, তারা আইনের ঊর্ধ্বে কিংবা তারা ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার করতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন ও মান অনুযায়ী পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ প্রয়োজনে কঠোর হতে পারে; কিন্তু তাদের অবশ্যই সব সময় জীবনের অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে এবং মৃত্যুঝুঁকি কমাতে হবে। শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রাণরক্ষার প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে পুলিশের।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে সরকার ও সরকারবিরোধী কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হাজারো বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ মুক্তি পেলেও শতাধিক সংখ্যক এখনও রয়েছে কারাগারে।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি বাংলাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়। এর পর থেকে অবরোধ সমর্থকদের ছোড়া পেট্রলবোমায় ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সারা দেশে অন্তত ২৪ জন মানুষ নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
আব্বাস ফয়েজ মনে করেন, দলের নেতা-কর্মীদের দ্রুত এসব অপরাধমূলক কাজ বন্ধ করতে বিএনপির নির্দেশ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের উচিত সহিংসতা না করে যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে তাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া।