চুল পরিমাণ হস্তক্ষেপও বরদাশত করবেন না বিচারকরা
বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন রয়েছে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। তিনি বলেন, ‘বিচারক বা বিচার বিভাগের ওপর চুল পরিমাণ হস্তক্ষেপও বরদাশত করবেন না বিচারকরা।’
আজ শনিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের শহীদ জগন্নাথ মিলনায়তনে ‘বিচারিক কার্যক্রমের সমন্বয়, সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি জনবল সংকট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে মামলাজটের সৃষ্টি হয় বলেও মন্তব্য করেন।
আইনজীবীরা সহযোগিতা না করলে বিশাল মামলাজট কমানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, তবে মামলাজটের পেছনে শুধু আইনজীবী বা বিচারকরাই দায়ী নয়। জনবল সংকট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবও এ জন্য দায়ী।
‘নির্বাহী বিভাগ আইন প্রবর্তন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল ও অবকাঠামো সৃষ্টি করে না। যেমন অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন এমন একটি আইন। এ আইনের অধীনে অনেক মামলা আছে, কিন্তু জনবল নেই।’
প্রধান বিচারপতি মামলাজটের পেছনে আইনজীবীদের মুলতবির আবেদনকেও দায়ী করেন। তিনি বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, অনেক আইনজীবী মামলার কার্যক্রমের ওপর মুলতবি চান। যারা বারবার মুলতবির আবেদন নিয়ে আসেন, তাঁদের মামলার মুলতবি দেবেন না।
‘আর আইনজীবীদের বলব, আপনারা জেলা জজদের সহযোগিতা করবেন। দুপুর ৩টার পরও আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেবেন।’ যোগ করেন প্রধান বিচারপতি।
আদালতের বেহালদশার বর্ণনা দিতে গিয়ে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রায়ই বিদ্যুৎ সমস্যা হয়। অনেক আদালতে দেখেছি, বিচার কাজ চলার সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় বিচারকরা ছোট একটি ফ্যান চালিয়ে গরম থেকে পরিত্রাণ পান। কিন্তু আইনজীবীদের অনেক কষ্ট হয়, যা কোনোভাবে সহ্য করার মতো নয়।’
কালো গাউন ছেড়ে দেওয়ার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সব সময় কালো গাউন পরে থাকতে হয়। এ নিয়ম ইংল্যান্ড থেকে এলেও অনেক জায়গায় গাউন পরার প্রথা উঠে গেছে। এ নিয়ে আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে।‘’
ইউএনডিপির সহযোগিতায় সেমিনারটির আয়োজন করেন ঢাকার বিচারিক আদালত। এতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান। সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান, মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সরকার, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ কামরুল হোসেন মোল্লা, ঢাকার পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
সেমিনারে বক্তব্য শেষে প্রধান বিচারপতি ঢাকার তিনটি বিচারিক আদালতের দৈনন্দিন কার্যতালিকার মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করেন।
বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট জনগণকে মোবাইল ফোনে মামলার সব তথ্য জানানোর জন্য নতুন অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এতে মামলার পরবর্তী তারিখ ও দৈনিক মামলা নিষ্পত্তির তথ্য ও মামলার রায়ের তথ্য পাওয়া যাবে।
এতে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের মামলার সকল তথ্য পাওয়া যাবে।