ইসির নির্বাচনী সফর শুরু, দিনাজপুরে সিইসি
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনী সফর শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা দিনাজপুর ও বগুড়া সফরে বের হয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি দিনাজপুর পৌঁছে গেছেন। এরপর চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব নির্বাচনী সফরে বের হবেন।
আজ সোমবার দুজন নির্বাচন কমিশনার এনটিভি অনলাইনকে নির্বাচনী সফর সম্পর্কে এসব তথ্য জানান।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চোধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিইসি স্যার দিনাজপুর ও বগুড়ায় নির্বাচনী সফরে চলে গেছেন। আমরাও আগামীতে যাব বিভিন্ন এলাকায়। যেতেই তো হবে। সামনে তো আর নির্বাচনের বেশি দিন বাকি নেই। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে চাইলে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সফরে যেতেই হবে।’
এই কমিশনার আরো বলেন, ‘সামনে নির্বাচন যেহেতু চলে এসেছে সেহেতু বসে থাকার আর সময় নেই। সব এলাকার নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কত কাজ সামনে এখন। সব কাজই তো করতে হবে। তবে চার কমিশনার কখন এবং কবে নির্বাচনী সফরে যাবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। এটা নিয়ে কমিশনে আলাপ হবে। পরে সিদ্ধান্ত হবে কে কোথায় যাবেন। তবে কমিশন সামনে পুরোদমে নির্বাচনী মুডে চলে যাবে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিইসি স্যার নির্বাচনী সফরে গেছেন। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই সফরে গেছেন। আর অন্য কমিশনাররা কবে নাগাদ নির্বাচনী সফরে যাবেন সেটি এখনো ঠিক হয়নি। সফরে যেতেই পারেন কমিশনাররা। তবে সফরে যাওয়ার আগে অবশ্যই কমিশন সভায় আলোচনা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে কে কোথায় বা কবে যাবেন। তা ছাড়া একজন কমিশনার কিন্তু চাইলেই ব্যক্তিগত সফরে যেতে পারেন যেকোনো সময়। আর সফরে গেলে তো নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হবেই। যেহেতু সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন।’
এসব বিষয়ে কথা হয় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আগামী শনিবার আমিও চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচনী সফরে যাব। পর্যায়ক্রমে নির্বাচন কমিশনার মহোদয়রাও নির্বাচনী সফরে যাবেন। এ ছাড়া ইতিমধ্যে আমি ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।’
ইসি সচিব আরো বলেন, ‘নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা দিনাজপুর চলে গেছেন। পরে সেখান থেকে বগুড়ায় যাবেন। সেখানে গিয়ে তিনি স্থানীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় পরামর্শ প্রদান করবেন। এ ছাড়া ইসি সচিবালয়ের বিভিন্ন অধিশাখা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার তার সবই করা হবে।’
ইসি সচিব আরো বলেন, ‘৩০ অক্টোবরের পরে যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি সিইসি জানিয়েছেন, “ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারিতে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।” তার মানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেশি দিন বাকি নেই। সুতরাং এখন থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে তোড়জোড় শুরু হবে।’
সিইসির নির্বাচনী সফর উপলক্ষে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইসির অফিস আদেশে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় যোগদানের জন্য ২৪ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর ও বগুড়া জেলা সফর করবেন। আজ সোমবার সকালে ঢাকার নিজ বাসভবন থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন সিইসি। বিকেলে দিনাজপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছান তিনি। রাতে তিনি সেখানেই থাকবেন।
কাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, দিনাজপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ জেলার সব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন সিইসি। বিকেল ৩টায় জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। একইভাবে ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন সিইসি। শুক্রবার ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
ইসি সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার ঢাকা অঞ্চলের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসি সচিব। তারপর সচিবালয়ের সংস্থাপন-১, সংস্থাপন-২, হিসাব শাখা, বাজেট ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা, জনবল-১, জনবল-২, সাধারণ সেবা শাখা-১, সাধারণ সেবা শাখা-২, সাধারণ সেবা শাখা-৩, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়ন শাখা, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নির্বাচনী সহায়তা শাখা-১, নির্বাচনী সহায়তা শাখা-২, বাজেট ও অর্থ শাখা, ক্রয় ও মুদ্রণ শাখা, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা-১, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা-২ এবং নির্বাচন প্রশাসন শাখার সঙ্গে বৈঠক করেন ইসি সচিব।
এ ছাড়া আজ সোমবার সচিবালয়ের সংস্থাপন-১, সংস্থাপন-২, হিসাব শাখা, বাজেট ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা, জনবল-১, জনবল-২, সাধারণ সেবা শাখা-১, সাধারণ সেবা শাখা-২, সাধারণ সেবা শাখা-৩, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়ন শাখা, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নির্বাচনী সহায়তা শাখা-১, নির্বাচনী সহায়তা শাখা-২, বাজেট ও অর্থ শাখা, ক্রয় ও মুদ্রণ শাখা, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা-১, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা-২ এবং নির্বাচন প্রশাসন শাখার সঙ্গে বৈঠক করেন ইসি সচিব।
এরই মধ্যে সিইসিসহ বেশ কয়েকজন ইসি ও ইসি সচিব জানিয়েছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে তাদের প্রস্তুতি প্রায় ৮০ ভাগ শেষ।
বাকি কাজের বড় একটি অংশ স্থানীয় প্রশাসনের। এজন্য কমিশন বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনী সফর শুরু করেছে। বিভিন্ন অঞ্চলের এসব সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত হওয়া। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার ভোটার তালিকার সিডি জেলা/উপজেলায় পাঠানো হবে এবং আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ভোটার তালিকার সিডির মুদ্রণ শুরু হবে বলে ইসির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
চলতি বছরের ৩০ আক্টোবর থেকে আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে ইসির। সংবিধান অনুযায়ী দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণ-গণনা শুরু হবে। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসেবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।