আদালতে নির্যাতনের বর্ণনা শাহাদাতের গৃহকর্মীর
ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন রাজীব ও তাঁর স্ত্রীর শিশু গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা মোতাবেক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
পুলিশ আজ সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে শিশুটিকে হাজির করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন জানায়। আবেদন মোতাবেক শিশু হ্যাপি ঢাকা মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তীর খাসকামরায় একান্ত গোপনে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হ্যাপি নির্যাতনের পুরো বর্ণনা দিয়েছে। বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী বিচারক তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় ক্রিকেটার শাহাদাত তাঁর বাসার গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই দিন রাত ৮টার দিকে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় সাংবাদিক প্লটের সামনে শরীরে ও চোখে আঘাতের চিহ্নসহ ১১ বছর বয়সী হ্যাপিকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখান থেকে সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক শিশুটিকে মিরপুর থানায় নিয়ে শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ হ্যাপিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর ওসিসিতে গিয়ে দেখা যায়, হ্যাপি হুইল চেয়ারে বসা ছিল। চোখ ছিল ফুলা। শীর্ণ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল নির্যাতনের চিহ্ন। হুইল চেয়ারে বসেই কথা বলল হ্যাপি। মানুষটা অনেক ছোট। নির্যাতনে শরীর আরো ভেঙে গেছে। গলার আওয়াজও অনেক ক্ষীণ।
শুধু কি ৬ সেপ্টেম্বর মারধর করেছে? জবাবে হ্যাপি বলে, ‘না। প্রতিদিনই মারত। যেকোনো কিছু হলেই মারত।’ শাহাদাতও মারতেন? প্রশ্নে হ্যাপি বলে, ‘হ্যাঁ, উনিও মারতেন। ভয় লাগত খুব।’
কেন মারধর করত? হ্যাপি বলে, ‘অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই মারত। আবার অনেক সময় ছোট ভুলের কারণে মারধর করত।’ হ্যাপি আরো বলে, ‘হাত দিয়ে অথবা হাতের কাছে যা থাকত তাই দিয়ে মারধর করত।’
৬ সেপ্টেম্বর কেন এত মারধর? হ্যাপি বলে, ‘আমাকে সুজি রান্না করতে বলে। আমি সুজি রান্না করি। সুজির রং অন্যদিনের থেকে একটু ভিন্ন হওয়ায় সন্দেহ করে তারা দুইজনেই মারতে শুরু করে।’ হ্যাপি বলে, ‘সুযোগ পেয়ে দরজা খুলে পালিয়ে যাই।’
হ্যাপি যাঁদের বিরুদ্ধে বলছিল তাঁদের একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন। বাংলাদেশের হয়ে ৩৮টি টেস্ট ও ৫১টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। হ্যাপির অভিযোগ, শাহাদাত আর তাঁর স্ত্রী নিত্য শাহাদাত নিয়মিতই নির্যাতন করতেন তার ওপর।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঘটনার পরপর ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
ওই ঘটনার পর থেকেই শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী পলাতক। পুলিশ তাঁদের এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি।
এদিকে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত শাহাদাতকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।