নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বিএনপি কার্যালয়
আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও এর আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আজ বুধবার সকাল থেকেই বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কার্যালয় ঘিরে জলকামান, প্রিজনভ্যান, এপিসি রাখা হয়েছে।
নয়াপল্টনে ঢোকার সব পথে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বিজয়নগর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত, কাকরাইল, জোনাকি গলি, মসজিদ গলি ও আশপাশে অবস্থান নিতে দেখা গেছে পোশাকধারী পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। কার্যালয়ের সামনে কাউকে কোনো স্থানে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না।
আলোচিত এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কয়েকজন নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে বিএনপির অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক রহমানকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ২১ আগস্ট মামলার রায়কে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘কুঠির ষড়যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী উপকমিশনার (এডিসি) শিবলী নোমান জানিয়েছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এডিসি বলেন, রায়ের পর যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ রাখা হয়েছে। তা ছাড়া জননিরাপত্তার বিষয়টি দেখা পুলিশের দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব থেকে পুলিশ সতর্ক রয়েছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায়।
বর্বরোচিত ও নৃশংস ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এই রায়ে দেবেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
আজ ভোর থেকেই আহতদের মধ্যে অনেকেই জড়ো হন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সমানে। কারো কারো পরিবারের সদস্যরা হাজির হয়েছেন। অনেকেই এসেছেন হুইলচেয়ারে করে, কেউ বা ক্র্যাচে ভর দিয়ে এসেছেন। তাঁদের শরীরে গ্রেনেড হামলার ক্ষতচিহ্ন। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড যেন বাংলাদেশে আর ফিরে না আসে। তাঁরা ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এ ঘটনার অবসান চান।