রায়ের প্রতিবাদে কাল থেকে বিএনপির ৭ দিনের কর্মসূচি
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে আগামীকাল ১১ অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ করা হবে। ১৩ অক্টোবর ছাত্রদল, ১৪ অক্টোবর যুবদল ও ১৫ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দল সারা দেশে বিক্ষোভ করবে। ১৬ অক্টোবর বিএনপি সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল, ১৭ অক্টোবর মহিলা দল ও ১৮ অক্টোবর শ্রমিক দল সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে।
আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে আজ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। ৪৯ আসামির মধ্যে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসির আসামির মধ্যে আরো রয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তখনকার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মাইন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মাইন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী প্রমুখ। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউকসহ বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ রায় দেন।
ওই রায়কে সরকারের ফরমায়েশি রায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এ রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, এ রায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রায়। আমরা এ রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। এটি ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নোংরা প্রকাশ।’
মহাসচিব বলেন, জাতির জন্য দুর্ভাগ্য, এ রায়ের মাধ্যমে সরকার আরো একটি নোংরা প্রতিহিংসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। যেভাবে করা হয়েছিল মিথ্যা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে।
ফখরুল বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন সাজার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, এ দেশে সাধারণ কোনো মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাবজেলে ছিলেন, তখন মামলার সাক্ষ্যে তারেক রহমান বা বিএনপির কারো নাম উল্লেখ করেননি। তখন তিনি এ ঘটনার জন্য সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেছিলেন। অথচ ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অবসরে যাওয়া পুলিশ কমকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে নিয়োগ দিয়ে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে, যা সম্পূর্ণ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, এখন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কথায় বলতে হয়, যে দেশে প্রধান বিচারপতি ন্যায়বিচার পান না, সে দেশে নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করা যায় না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ,আমরা দেশের জনগণকে আহ্বান জানাব রাজপথে এসে এ অনির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে।’
কোনো কর্মসূচি দেবেন কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে, পাশাপাশি আইনি কর্মসূচিও থাকবে। তবে সেটি পরে জানতে পারবেন আপনারা।’