আমরা বিচার করি নাই, আদালত করেছে : নাসিম
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ন্যায়বিচার হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘বিচার একদিন হবেই, সেই বিচার হয়েছে। আমরা তো কেউ নিজেরা বিচার করি নাই, আদালত বিচার করেছে, ট্রাইব্যুনাল বিচার করেছে… সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে করেছে।’
আজ বুধবার দুপুরে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় শেখ ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন মোহাম্মদ নাসিম।
নাসিম বলেন, ‘অপরাধীর যদি বিচার না হয় তাহলে কী করে দেশে আইনের শাসন থাকবে? আজকে বিচার হয়েছে। আল্লাহর রহমতে রায় হয়েছে। অনেকের ফাঁসি হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, আইনে বিচার হয়েছে ইনশা আল্লাহ। ন্যায়বিচার হয়েছে বাংলাদেশে।’
প্রতিহিংসার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন ‘আমরা নিজের হাতে বিচার নেই নাই। আইন আদালত বিচার করেছে। জনগণের মনে স্বস্তি এসেছে। ২১ আগস্টে আইভি রহমান হত্যা হয়েছে, নিহত হয়েছে, তাঁর আত্মা শান্তি পেয়েছে। প্রতিহিংসায় আমরা বিশ্বাস করি না। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ২০০০ থেকে ছয় সাল পর্যন্ত… সাত সাল পর্যন্ত কী অত্যাচার নির্যাতন করেছে আপনারা জানেন।’
বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম বলেন, ‘আজকে তারা এখন ন্যায়বিচারের কথা, আইনের শাসনের কথা বলে। আজকে আপনি জেলে গেছেন। বেগম জিয়া, আমাদের নির্দেশে আপনি জেলে যান যাই। আপনি গেছেন… আদালতের নির্দেশে গেছেন। দুর্নীতি করেছেন, আদালত নির্দেশ দিয়েছে, জেলে গেছেন। ১০ বছর ধরে মামলা হয়েছে, চলেছে। সাক্ষী হয়েছে, প্রমাণ হয়েছে আপনি জেলখানায় চলে গেছেন দোষী সাব্যস্ত হয়ে। যদি মুক্ত হন, আদালতের নির্দেশে হবেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই। আমরা চাই আপনি মুক্ত হন, নির্বাচনে আসেন আমরা চাই…।’
‘১৪ সালে একবার পালিয়ে গিয়েছিলেন, দয়া করে এবার আর পালাবেন না। একবার পালিয়ে গিয়ে সব হারিয়েছেন। আমও গেছে, ছালাও গেছে আপনাদের সে সময়ে। পার্লামেন্টে নাই, দুনিয়ার কোথাও আপনারা এখন নাই। রাস্তায় ঘুইরা ঘুইরা খালি চিৎকার করে যাচ্ছেন, ন্যায়বিচার চাচ্ছেন। ন্যায়বিচার তো কেউ করবে না, কেননা আপনারা যে বিচার করছেন ওই বিচারই ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশে চলছে। ওই বিচারই চলবে ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশে। অপরাধের বিচার হবেই’, বলেন মোহাম্মদ নাসিম।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খেলা হবে মাঠে, রেফারি থাকবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনকে পরিচালনা করবে দেশ। নির্বাচনের সময় তিন মাস। এই কয়দিন পরে আমরা… একটি সরকার হবে যে সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা করবে। দুনিয়ায় যেভাবে হয় এখানেও সেইভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে, শেখ হাসিনা সরকার রুটিন ওয়ার্ক করবে। তাহলে ভয় কেন? খেলার মাঠে আসেন, খেলতে আসেন। নাহলে এবার বিএনপি যদি খেলতে না আসে, যদি রাজনীতি না করে, ইলেকশন যদি না করে, বাটিচালান দিয়েও ইনশা আল্লাহ বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না বাংলাদেশে।’
নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক। মোহাম্মদ নাসিম ছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, আবুল কালাম আজাদসহ অন্য নেতারা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আজ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ৪৯ আসামির মধ্যে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসির আসামির মধ্যে আরো রয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তখনকার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মাইন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মাইন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী প্রমুখ। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউকসহ বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
আজ রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ রায় দেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানও।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।