হরিণটানায় তথ্য সংগ্রহ, ৮৫ শতাংশই আ. লীগ!
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে খুলনার হরিণটানা থানা পুলিশ। সেই তালিকায় দেখা গেছে, চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন শিক্ষকের নাম। এদের ভেতরে ৬৩ জন বা ৮৫ শতাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থক। ছয়জন বা ৮ শতাংশ বিএনপি সমর্থক। চারজন বা ৫ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। একজন শিক্ষক কোনো দল করেন না বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত রোববার খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সিটি স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) একটি আবেদনপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে বিষয় হিসেবে লেথা ছিল : প্রিজাইডিং/সহ. প্রিজাইডিং/পোলিং অফিসারদের নামের তালিকা প্রেরণ প্রসঙ্গে।
চিঠিতে বলা হয়, যথাযথ সম্মান পূর্বক উপযুক্ত বিষয় প্রেক্ষিতে আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে প্রিজাইডিং/ সহ. প্রিজাইডিং/ পোলিং অফিসারদের নামের তালিকা নিম্নোক্ত নির্ধারিত ছক মোতাবেক প্রদান করা হলো।
সেই তালিকায় ছিল হরিণটানা থানাধীন চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন শিক্ষকের তালিকা। তালিকায় শিক্ষকদের নাম, পদবি, মোবাইল নম্বর, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত নামে ছক ছিল। ওই ৭৪ জন শিক্ষকের মধ্যে চারজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে এনটিভি অনলাইনের এই প্রতিবেদক। তাদের মধ্যে একজন খুলনার রাজবাঁধের প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বিমল কৃষ্ণ বৈরাগী।
হরিণটানা থানা পুলিশ সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে আপনাকে ‘আওয়ামী লীগ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনাকে কি কখনো পুলিশ ফোন করেছিল- এমন প্রশ্নে কৃষ্ণ বৈরাগী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। স্থানীয় সবার সাথেই আমার চলতে হয়। এই বিষয়ে কথা বলার মতো ক্ষমতা আমার নেই।’
কথা হয় রায়েরমহল হামিদনগর হাজী মো. মহাসীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ম্যোল্লা তাজউদ্দিনের সঙ্গেও। পুলিশের তালিকায় তাঁকে ‘বিএনপি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ফোন করেনি। তবে আমাদের স্কুলে এসেছিল। স্কুলে এসে তারা কতজন শিক্ষক আছে, তাঁদের নামের তালিকার সঙ্গে ফোন নম্বর নিয়ে যায়। মাস খানেক আগের ঘটনা এটা। পরে অন্য স্কুলের শিক্ষকদের মুখেও শুনতে পেলাম একই কথা। তাদেরও নাম আর ফোন নম্বর নেওয়া হয়েছে। তখন শুনলাম যে, নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে তথ্য নিতে এসেছে পুলিশ।’
হোগলাডাঙ্গা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পপি মিস্ত্রী। পুলিশের তালিকায় তাঁকে ‘আওয়ামী লীগ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্কুলে পুলিশ গিয়েছিলো কিনা আমি জানি না। তবে আমার স্বামীর কাছে পুলিশ দুইবার ফোন করেছিল। ফোন করে জানতে চেয়েছে, আমি কী করি, গ্রামের বাড়ি কোথায়, বাবা-মায়ের নাম।’
আরেকজন হলেন সরদার রফিকুল ইসলাম। তিনি শহীদ আবুল কাশেম কলেজের সহকারী অধ্যাপক। পুলিশের করা তালিকা অনুযায়ী তিনি বর্তমানে ‘বিএনপি’। তবে আগে ‘জামায়াত’ ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজ এলাকার আশপাশে সব সময় অবস্থান করেন সিটি এসবির মনিরুল ইসলাম নামের একজন কর্মকর্তা। মাস তিনেক আগে তিনি অনেকের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। বলেছিলেন, কেন্দ্রে নাকি তাঁকে পাঠাতে হবে।
একই কলেজের শিক্ষক আজিজুর রহমান, মনিরুজ্জমান হাওলাদার ও মো. নূর ইসলামকে বটিয়াঘাটা থানা থেকে ফোন করা হয়েছিল। পুলিশের করা তালিকা অনুযায়ী তাঁরা তিনজনই জামায়াতের সমর্থক। জানতে চাইলে সরদার রফিকুল আরো বলেন, বটিয়াঘাটা থানা থেকে ফোন করা হয়েছিল। বাবা-মায়ের নাম, কোথায় থাকে, জামায়াত করে কি না, এসব বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
এভাবে পুলিশ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটা কি হয় নাকি? নির্বাচন কমিশন তালিকা সংগ্রহ করেছিল। পুলিশের করার কথা না। তবে যদি কেউ করে এবং আমরা প্রমাণ পাই তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী এনটিভি অনলাইনকে জানান, তারা এখনও এই ধরনের কার্যক্রম শুরু করেননি।
হরিণটানা থানা পরিদর্শক (তদন্ত) বিজয়া জানান, ওসি নাসিম খান দুই দিনের ছুটিতে গেছেন। তিনি না এলে কিছু বলতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আরো একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করার জন্য সরকার পরিকল্পনা শুরু করেছে।