‘শিশুর অধিকার রক্ষায় আমরা পিছিয়ে আছি’
২০১৮ সালে চার হাজার ৫৬৬টি শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০১৭ সালের থেকে যা বেশি। ওই বছর এমন ঘটনা ছিল তিন হাজার ৮৪২টি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘শিশুর অধিকার রক্ষা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’
আজ বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম।
২০১৮ সালে দেশের ১৫টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত শিশু খুন, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অপমৃত্যুসহ বিভিন্ন ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। আর এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সে সম্পর্কে জানাতেই বুধবার এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে সংস্থাটি। এতে জানানো হয়, ২০১৮ সালে চার হাজার ৫৬৬টি শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যা ২০১৭ সালের চেয়ে বেশি।
২০১৮ সালে অপমৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৩৫৪ শিশুর, যা ২০১৭ সালে ছিল এক হাজার ৭১০ জন। ২০১৭ সালে শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ছিল ৮৯৪টি আর গত বছর তা কমে ৮১২ তে দাঁড়িয়েছে। শিশু অপহরণ, নিখোঁজ ও উদ্ধারের সংখ্যা বেড়েছে, ২০১৭ সালে ছিল ৪৩০টি, ২০১৮ সালে এমন ঘটনা ঘটেছে ৫৭০টি। শিশুর ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা আগের বছরের ২৭১ থেকে কমে গত বছর ২৬২টিতে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে শিশুর অপঘাত মৃত্যু বেড়েছে, ২০১৭ সালে যা ছিল ২১৩টি ২০১৮ সালে প্রাণ হারিয়েছে ৩৯৬টি শিশু। ২০১৭ সালে ৩০৬টি শিশু বাল্যবিবাহ বা অন্যান্য ঘটনার শিকার হয়, আর ২০১৮ সালে এসে তা কমে ১৭২টিতে দাঁড়ায়।
এ ছাড়া গত বছর প্রতি মাসে ১৯৬টি শিশুর অপমৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ৩৪টি শিশু খুনের ঘটনায় বিচারহীনতা ও বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের এই প্রতিবেদনে।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘যে হারে শিশুদের প্রতি নির্যাতন চলছে, সেটা কোনো ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। সামগ্রিক চিত্র তো অনেক বেশি, যদিও সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে তা বলতেই হবে। আমরা তারপরও বলব শিশু অধিকার রক্ষা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’
আর জাতীয় নির্বাচনের দিন রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূ গণধর্ষণ প্রসঙ্গে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘এতে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ গণধর্ষণের ঘটনায় অপরাধী যে দলের হোক, তাকে শাস্তি পেতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমরা কিন্তু খুব স্পষ্টভাবে বলেছিলাম, ধর্ষণের মতো চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। অপরাধের পেছনে যে বা যারাই থাকুক না কেন দ্রুত সময়ের ভেতরে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারপরে সে কোন দলের লোক, পুলিশ দেখবে অপরাধী কারা। কোন দলের লোক বলে তো অপরাধীর কোনো মাফ নেই।’