‘বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে রাজনকে হত্যা’
চুরির অভিযোগে নয়, বলাৎকারে ব্যর্থ হয়েই হত্যা করা হয়েছিল শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে। আর হত্যার দায় থেকে বাঁচতেই দেওয়া হয়েছিল চুরির অপবাদ।
আজ সোমবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে এমন সাক্ষ্য দেন রাজন হত্যা মামলার আলোচিত সাক্ষী সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিয়াস মেম্বার।
রাজন হত্যার পরপরই আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা ও অর্থের বিনিময়ে পুলিশের মাধ্যমে আপসরফার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। অন্যতম আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরবে পালাতে গিয়াস উদ্দিনই পুলিশের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
অপরদিকে রাজনকে বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে হত্যার অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই। অভিযোগ ছিল, কুমারগাঁও এলাকার নৈশপ্রহরী ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার রাজনকে একা পেয়ে বলাৎকারের চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে রাজনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে চোর ধরার কথা বলে কামরুলসহ তাঁর ভাইদের খবর দিয়ে আনেন ময়না। তাঁরা এসে রাজনের ওপর বর্বর নির্যাতন চালান।
আজ আদালতে এমন সাক্ষ্য দেন গিয়াস মেম্বার। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বাদীপক্ষের আইনজীবী শওকত আহমদ বলেন, ‘আদালতে গিয়াস মেম্বার বলেছেন, ভোরে সবজি বিক্রি করতে আসা রাজনকে একা পেয়ে বলাৎকারের চেষ্টা চালান ময়না চৌকিদার। এতে রাজন রাজি না হলে চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে নির্যাতন চালানো হয়।’
শওকত আহমদ বলেন, প্রথমে গিয়াস মেম্বার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেছিলেন। তখন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা তাঁকে বৈরী ঘোষণা করলে তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে এমন সাক্ষ্য দেন।
এর আগে সকালে রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে গিয়াস মেম্বারের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
শিশু রাজন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের আজ ষষ্ঠদিনে গিয়াস মেম্বার ছাড়াও কুমারগাঁও এলাকার কুরবান আলী, আফতাব মিয়া ও আবদুল করিম সাক্ষ্য দেন। আজ দুপুর ১টা থেকে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা তাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন।
এই নিয়ে রাজন হত্যা মামলায় মোট ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলো। আগামীকাল ও ১৪ অক্টোবর এ মামলায় টানা সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন আদালত। এ মামলায় মোট ৩৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা রয়েছে।
এর আগে গত ১ অক্টোবর রাজনের বাবা আজিজুর রহমান ও মামলার বাদী জালালাবাদ থানার এসআই (বরখাস্তকৃত) আমিনুল ইসলাম আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ৪ অক্টোবর আলোচিত এই হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেন রাজনের মা লুবনা বেগম, জিয়াউল হক, আল আমিন ও মাসুক মিয়া। ৭ অক্টোবর রাজনের গ্রাম বাদেআলীর ইশতিয়াক আহমদ রায়হান, নিজাম উদ্দিন, আবদুজ জাহির মেম্বার, শেখপাড়ার পংকি মিয়া এবং ৮ অক্টোবর লুৎফুর রহমান, বাবুল মিয়া, কাচা মিয়া ওরফে কচি আদালতে সাক্ষ্য দেন।
রোববার সাক্ষ্য দেন পশ্চিম জাঙ্গাইলের বাসিন্দা মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে আনোয়ারুল হক, কুমারগাঁওয়ের বাসিন্দা জাকিরের ছেলে বেলাল আহমদ ও ইসকন্দর আলীর ছেলে আবদুল হান্নান।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযুক্তরা হচ্ছেন সৌদি আরবে আটক সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও শেখপাড়ার কামরুল ইসলাম, পলাতক থাকা তাঁর ভাই শামীম আহমদ, পলাতক থাকা দিরাইয়ের বাসিন্দা পাভেল, কামরুলের ভাই গ্রেপ্তার হওয়া মুহিদ আলম, আলী হায়দার, তাজ উদ্দিন আহমদ বাদল, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, দুলাল আহমদ, নগরীর জালালাবাদ থানার পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।