ঘোড়ার ঘরের পাশে প্রথম বোমার বিস্ফোরণ
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে হোসেনী দালানের সামনে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথম বোমার বিস্ফোরণটি ঘটতে দেখেছেন দুলদুল ঘোড়ার ঘরের পাশে। এরপর আরো কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তাঁরা। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের চোখের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মানুষ। রক্তে ভেসে যায় ওই এলাকা। তখন রাত আনুমানিক দেড়টা।
মাজারের সামনে জুতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিরাজ আজ শনিবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ৩২ বছর ধরে মাজারের জুতা পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছি। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ঘোড়ার ঘরের সামনে প্রথম একটি বিস্ফোরণ হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। একপর্যায়ে আমরাও মাজার থেকে বের হয়ে গেলাম। ততক্ষণে আরো দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় অনেক মানুষকে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়তে দেখলাম।’
তাজিয়া মিছিলের ঘোড়ার চালক আনোয়ার হোসেনও এ সময় সেখানেই ছিলেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যখন দুলদুল ঘোড়ার পা ধুইয়ে দিচ্ছিলাম তখন হঠাৎ বিস্ফোরণ হলো, এরপর হৈ চৈ শুরু হয়। আমি তাড়াতাড়ি করে ঘোড়াগুলোকে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিই। কারণ ঘোড়ার সঙ্গে অনেক মূল্যবান জিনিস ছিল।’
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজাধানীর হোসেনী দালানের মাজারের ভেতরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাজ্জাদ হোসেন সানজু নামের এক কিশোর নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক। আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে উগ্রপন্থী বার্তা প্রচার ও প্রচারণা পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ‘সাইট’।
আজ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইমাম ঘরের পর হোসেনী দালানের মাজার। মাজারের প্রথম গেটে বিভিন্ন দোকান সাজানো। সেখান থেকে মাজারে ব্যবহৃত জিনিসপত্র কেনাকাটা করে সবাই দ্বিতীয় গেট দিয়ে মাজারে প্রবেশ করে। প্রথম গেটে নিরাপত্তা প্রহরী ও সিসি ক্যামেরা রয়েছে।
এরপর দ্বিতীয় গেটের ভেতর দিয়ে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে হয় মাজারে। দ্বিতীয় গেটের পাশে রয়েছে দুলদুল ঘোড়া রাখার স্থান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম বিস্ফোরণটি যেখানে ঘটেছিল, সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো। তার পাশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। বিস্ফোরণের জায়গায় এখনো জমাট রক্তের দাগ রয়েছে। ওই এলাকাটি বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। রক্তাক্ত জায়গাটি স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ঘিরে রাখা জায়গায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
গতকাল রাতে আসিফ নামে এক যুবক সেখানে ছিলেন। তাঁর দেওয়া বর্ণনা মতে, মাজারে প্রবেশ করার সময় দ্বিতীয় গেটের দেয়াল ঘেঁষে ঘটে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা। একটি শিশুর হাতে প্রথম বোমাটি বিস্ফোরণ হওয়ার পর সে দৌড় দেয়। তার হাত রক্তাক্ত হয়ে পড়ে। এ সময় আরো কয়েকজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর আরো দুটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির জন্য এ সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিল।
মাজারের জুতা রাখার প্রহরী শানু বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মিছিলের প্রস্তুতির সময় একটি বিস্ফোরণ হয়। কয়েকজন লোক দৌড় শুরু করলে আমরা জুতা রেখে মাজারের ভেতরে ঢুকে পড়ি। এরপর আরো দুটি বিস্ফোরণ হয়। এ সময় অনেকে আহত হয়ে কান্না শুরু করে। চারদিকে চিৎকার-চেঁচামেচি। কিন্তু তাদের হাসপাতালে নেওয়ার মতো সেখানে কেউ ছিল না, ভয়ে সবাই শুধু পালাচ্ছিল।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান মতে, প্রতিবছরের মতো মহরমের রাতে শিয়া সম্প্রদায়ের এ তাজিয়া মিছিলে শামিল হতে সমবেত হয়েছিল শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।