৪০০ বছরে প্রথম হামলা ইমামবাড়ায়
রাজধানীর হোসেনী দালান চত্বরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা পৌনে ৪০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। মোগল আমলে নির্মিত এ ভবনটিতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে আয়োজকরাও। তাঁদের মতে, সব সম্প্রদায়ের লোক তাঁদের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এ ঘটনার আগে তাঁরা কোনো হুমকি পাননি।
এ বিষয়ে হোসেনী দালানের মাজার কমিটির প্রধান এম এম ফিরোজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। বিগত ৪০০ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি।
প্রতিবছরের মতো প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের অভ্যন্তরীণ সিসিটিভি এবং নিজস্ব ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছে।’
‘এ ঘটনায় শিয়া সম্প্রদায় খুবই মর্মাহত। বিগত ৪০০ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটেনি। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা বলে আমি মনে করি।’
মাজার কমিটির প্রধান বলেন, ‘আগে থেকে আমরা কোনো হুমকি-ধমকিও পাইনি। আমরা এমন এক জাতি কখনো কারো সঙ্গে বিদ্বেষ করিনি। এখানে আমাদের লোক খুবই কম থাকে। অধিকাংশ আহলে সুন্নাত আল জামায়াতের লোকজন অংশ নেয়। ভাই ভাই হিসেবে কাজ করি আমরা, কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই।’
এ বিষয়ে হোসেনী দালানের মাজারের খাদেম সিরাজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মধ্যরাতে আমাদের দ্বিতীয় মিছিলটি বের হওয়ার কথা ছিল। আমি যখন মিছিলটি বের করব ঠিক সেই মুহূর্তে পরপর তিনটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।’
ইমামবাড়ার দেয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায়, মোগল সম্রাট শাহজাহানের সময় এটি নির্মিত হয়। শাহ সুজার সুবেদারির সময় এক নৌ-সেনাপতি মীর মুরাদ ১৬৪২ সালে এটি নির্মাণ করেন। ১৮৩২ সালে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দুই দফায় এর সংস্কার হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি প্রায় বিধ্বস্ত হয়। পরে খাজা আহসানউল্লাহ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে তা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করেন।
১৯৯৫ সালে একবার এবং পরর্বতী সময়ে ২০১১ সালে দক্ষিণের পুকুরটির সংস্কার করা হয়। ২০১১ সালে ইমামবাড়ার সংস্কার সাধন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজাধানীর হোসেনী দালানের মাজারের ভেতরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাজ্জাদ হোসেন সানজু নামের এক কিশোর নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক। আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে উগ্রপন্থী বার্তা প্রচার ও প্রচারণা পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ‘সাইট’।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান মতে, প্রতিবছরের মতো মহরমের রাতে শিয়া সম্প্রদায়ের এ তাজিয়া মিছিলে শামিল হতে সমবেত হয়েছিল শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।