স্মার্টকার্ড দিতে আরো দেড় বছর সময় নিল ইসি
জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সময় পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কয়েক দফা পরিকল্পনা নিয়েও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ অগ্রসর করতে না পারায় অতিরিক্ত দেড় বছর সময় চাওয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশন ইসিকে সেই অতিরিক্ত সময়ের অনুমোদনও দিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের পর আজ বৃহস্পতিবার প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সিঅ্যান্ডএজি বরাবর এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেন ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী।
চিঠিতে বলা হয়, “নির্বাচন কমিশনের বাস্তবায়নাধীন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ নামক এ প্রকল্পটির মেয়াদকাল ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আগামী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এ আদেশ জারি করা হলো।”
এর আগে গত ২৭ আগস্ট ইসি এ প্রকল্পের মেয়াদ আরো ১৮ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করে। মো. সাইফুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
চিঠিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন আইডিইএ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ ১৮ মাস অর্থাৎ আগামী বছরের জুনের পরিবর্তে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য সময় চাওয়া হয়।
চিঠিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তিনটি প্রশ্নের উত্তরও পাঠানো হয়েছে। প্রশ্নগুলো হলো- প্রকল্পের আওতায় স্মার্ট (এনআইডি) উৎপাদনের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বর্তমানে সমঝোতা হয়েছে কি না, প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ১৮ মাস কেন প্রয়োজন হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান এবং উল্লেখিত সময়ের জন্য কোনো ব্যয় বৃদ্ধি হবে না এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান। প্রশ্নগুলো উত্তরসহ পাঠানো হয়।
আইএমইডির প্রশ্নের জবাবে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, দাতা সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে, সময় বাড়ানো হলেও এতে কোনো ব্যয় বাড়বে না। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ে স্মার্টকার্ড তৈরি করা গেলেও সাড়ে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে না।
ইসির প্রস্তাবনায় একমত হয়ে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শিগগিরই স্মার্টকার্ড তৈরির কার্যক্রম শুরু করা হবে। মেয়াদ বাড়াতে এখন এ কার্ড বিতরণের সময়ও বেশি পাওয়া যাবে। এতে কাজটি আরো ভালোভাবে করা যাবে। প্রকল্পটির মেয়াদ না বাড়ালে হাতে সময় কম থাকায় তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করতে হতো। তাড়াহুড়ার কাজ ভালো হয় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, আমরা দেশের সব নাগরিকের হাতে নির্ভুল স্মার্টকার্ড তুলে দিতে চাই। সেজন্য এরই মধ্যে কারো এনআইডিতে কোনো তথ্য ভুল থাকলে তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় আগামী জুনের মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। উৎপাদন শুরুর কথা ছিল চলতি বছরের অগাস্টেই। এ বছরের জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণের বিষয়ে ফ্রান্সের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। সেই চুক্তি অনুযায়ী স্মার্টকার্ড উৎপাদন শুরু করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবার হাতে তা পৌঁছে দেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন প্রায় ৭০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন চলছে ছবি তোলা ও নিবন্ধনের কাজ। যার মধ্যে ৪৫ লাখের মতো ভোটার রয়েছে। এ কাজ শেষ হলে দেশে ভোটার বেড়ে দাঁড়াবে ১০ কোটির বেশি।
সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রমের পর আঠারোর কম বয়সীদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেওয়ার এবারই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। ১৮ বছরের কম বয়সীদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন’ হওয়ার পর তাদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে নিবন্ধিত হলেও ১৮ বছর পূর্ণ না হলে কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে ইসি।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার রয়েছে ৯ কোটি ৬২ লাখ ২৬ হাজার ৫৪২ জন।