‘বাংলাদেশের লোভী লেখকগুলো পুরস্কার আঁকড়ে বসে আছে’
বাংলাদেশে ব্লগারদের ওপর হামলাকারীরা ধর্মপ্রাণ বলেই সরকার তাদের শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করছে না বলে অভিযোগ করেছেন তসলিমা নাসরিন। দেশে ক্রমাগত ব্লগারহত্যার মতো সহিংসতার ঘটনায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জানানো প্রতিবাদে এ কথা বলেন তিনি।
তসলিমা নাসরিন লেখেন, ‘খবরে দেখছি দুর্বৃত্তরা নাকি প্রকাশকদের কুপিয়ে খুন করেছে। মুসলমানদের দুর্বৃত্ত কেন বলছে বুঝি না। খুনিগুলোর তো একটা পরিচয় আছে। নাকি? খুনিগুলো ধার্মিক, কোরআন হাদিস মেনে চলে। ওদের দুর্বৃত্ত বলাটা কি ঠিক হচ্ছে? দুর্বৃত্ত হলে সরকার ঠিক ঠিক ওদের শাস্তির ব্যবস্থা করত। কিন্তু ধর্মপ্রাণ বলেই করছে না। সরকার নিজেও ধর্মপ্রাণ, দেশের অধিকাংশ মানুষই ধর্মপ্রাণ। ধর্মপ্রাণদের সাতখুন মাফ। এ কথা তো আমরা জানিই।’
আজ রোববার সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তসলিমা আরো লেখেন, ‘আমি যখন আশির দশক থেকে লিখতে শুরু করেছিলেম ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে, আর যখন আমার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে মৌলবাদীরা মিছিল, মিটিং করত, আমার মাথার মূল্যও ঘোষণা করেছিল। তখন দেশের বরেণ্য অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক, অনেক নারীবাদী আমাকে দোষ দিত, বলত আমি নাকি বাংলাদেশে মৌলবাদ উত্থানের জন্য দায়ী। আমি দায়ী? হ্যাঁ, আমি দায়ী, আমি মৌলবাদের বিরুদ্ধে না লিখলে, ধর্মের সমালোচনা না করলে নাকি দেশের অবস্থা ভালো থাকত। সবাই সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারত। আমি নষ্ট করেছি সব। সরকার আমাকে দেশ থেকে তাড়ানোর পরও ওরা কোনো প্রতিবাদ করেনি। বরং আপদ বিদায় হয়েছে বলে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ হলেও কেউ রা শব্দ করেনি। বরং কেউ কেউ তো আগ বাড়িয়ে গেছে আমার বই নিষিদ্ধ করতে, সরকারের হাত-পা ধরেছে আমার বইয়ের মুদ্রণ, বিক্রি সব বন্ধ করার জন্য। এইসব চরিত্রহীনগুলো আজ দেশের জনপ্রিয় ও স্বনামধন্য শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী। দেশের লেখকদের চোখের সামনে প্রায় প্রতি মাসে দুই মাসে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে দেখেও প্রায় কেউই মুখ খুলছে না। ভারতে হিন্দু মৌলবাদীদের তাণ্ডব দেখে এক এক করে লেখক বুদ্ধিজীবী বিজ্ঞানী তাঁদের জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের লোভী লেখকগুলো পুরস্কার আঁকড়ে বসে আছে। কাঙালেরা নিজেদের যশ খ্যাতি আগলে রাখছে। চরিত্রহীনে, কাপুরুষে আজ দেশ ছেয়ে গেছে। কারও ওপর আর বিন্দুমাত্র কোনো আশা নেই।’
সবশেষে তসলিমা বলেন, ‘বয়স হয়েছে। এখন আর এসব নিতে পারি না। বাংলাদেশের চারজন প্রকাশক আর ব্লগারকে নাকি কুপিয়েছে নবীর লোকেরা। একজন প্রকাশক মারা গেছেন, বাকিরা মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। প্রতি ব্লগার হত্যার পর ভাবি এ-ই হয়তো শেষ ব্লগারহত্যা, হয়তো শেষ অবধি শেষ হতে যাচ্ছে বিশ্বাসীদের বর্বরতা, হয়তো ওদের বোধোদয় হয়েছে। কিন্তু কোথায়! ক’দিন পর আবারও শুনতে হয় নতুন নৃশংসতার খবর।’