প্রিয়া সাহার অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সংখ্যালঘু গুম ও নির্যাতন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশি নাগরিক প্রিয়া সাহার অভিযোগকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রিয়া সাহা কী উদ্দেশে এ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ করে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করলেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ শনিবার সকালে তাঁর বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু কিংবা তাঁর ওপর নির্যাতন হয়েছে, এ মর্মে কখনোই আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তা ছাড়া তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছেও কোনো সময় প্রতিকার চেয়েছেন বলে রেকর্ড নেই। তার পরও তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে কেন এ অভিযোগ করলেন, তা আমরা দেখব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। এখানে সবাই সমান অধিকার নিয়ে সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করছে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোনো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এদিকে আজ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘(প্রিয়া সাহার) এ ধরনের বক্তব্যের জন্য আমরা কড়া প্রতিবাদ এবং ধিক্কার জানাচ্ছি। তাঁর অসত্য অভিযোগের কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার একটি উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।’
আসাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সম্মান, উন্নয়ন, গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার জন্য এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তিনি যা বলেছেন তা অমূলক ও মিথ্যা।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের এক শতক জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে, এ ধরনের কথা কেউ বলতে পারবে না।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিঞ্ঝুতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে কথা বলেন। এতে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে প্রিয়া সাহা ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে (বাংলাদেশে) প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (তিন কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ডিসঅ্যাপেয়ার (নিখোঁজ) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনো সেখানে (বাংলাদেশে) ১৮ মিলিয়ন (এক কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু আমাদের (বাংলাদেশে) থাকতে সাহায্য করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’
এ সময় ট্রাম্প জানতে চান, ‘কারা জমি দখল করেছে? কারা বাড়ি দখল করেছে?’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। তারা সব সময় পলিটিক্যাল শেল্টার (রাজনৈতিক ছত্রছায়া) পায়।’
হোয়াইট হাউজের ওয়েব সাইটের বিবৃতিতে বাংলাদেশি ওই নারীকে মিসেস সাহা পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা যায় ওই নারীর নাম প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক।