এসব কী বললেন খায়রুজ্জামান লিটন!
তালিকা ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের গদি উল্টে দিতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন খায়রুজ্জামান লিটন।
urgentPhoto
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে যে শান্তি বিরাজ করছে, খুনিরা নেই, থাকলেও চুপচাপ থাকে। চেষ্টা করে মাঝেমধ্যে ফুটফাট দুই একটা ফাটাতে। কিন্তু সাহস হয় না সামনে এসে দাঁড়াবে। সেই খুনির দল বিশ্ববিদ্যালয়কে তছনছ করতে পারছে না। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সজাগ আছে। পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সজাগ আছে বলেই খুনির দল কিছু করতে পারছে না। প্রশাসন আছে খুব আরামে। প্রশাসন বলতে যে দুজনকে বোঝায় তারা আমাদেরই খুব কাছের মানুষ। আমার তো ভীষণ কাছের মানুষ। কিন্তু কাছের মানুষ থেকে লাভ কি? কাছের মানুষ যদি দলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করে তাহলে সেই কাছের মানুষ দিয়ে কোনো লাভ নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি জানিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমার বন্ধুর মতো একজন (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য)। কথা দিয়েছিলেন তিনি, লিটন ভাই আমি একবার শুধু হই, আমি আপনার লিস্ট ধরে ধরে চাকরি দেব। আমরা লিস্ট দিয়েছি প্রায় বছর দেড়েক আগে। সেই লিস্ট কোথায় গেল? আমি জানি না। তাদের বাড়িতে ডিম পাড়ছে কি না, ডিমে তা দিচ্ছে কি না, আমি জানি না। কিন্তু তাঁদের শিক্ষক নিয়োগ কিন্তু অব্যাহত আছে এবং বিতর্কিত শিক্ষক। বিতর্কিত ঘরানা থেকে আসা শিক্ষক নিয়োগ অব্যাহত আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি ইঙ্গিত করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘এত শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাস চালাচ্ছেন মনে করছেন আপনাদের দক্ষতা? না...আমরা যদি ইশারা দেই মহানগর আওয়ামী লীগের আপনাদের গদি উল্টাতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। তাকিয়ে দেখেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের, কী অবস্থা করেছে। তাকিয়ে দেখেন, জাহাঙ্গীরনগরে কী অবস্থা করে। তাকিয়ে দেখেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। কী অবস্থা করে ছাত্ররা। আমরা করতে দেই না বলে ক্রেডিটটা আপনারা নিতে চেষ্টা করবেন না, প্লিজ। অনেক উপকার করেছেন আমাদের। ক্রেডিটটা নিয়েন না যে আপনাদের দক্ষতার কারণে আপনারা যোগ্য কর্মকর্তা বলে এ বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত আছে। আমি রেখেছি। আমাদের কর্মীদের আমরা নিষেধ করি। করতে হবে না, থাম, দেখছি। কিন্তু কত দিন দেখব? আর তো বেলা চলে যায়। সময় তো কাছে আসে। আপনারা যদি মনে করে থাকেন আপনারা মৃত্যু পর্যন্ত ভিসি, প্রোভিসি থাকবেন, সেটা কি ঠিক? আপনারা কি থাকবেন মৃত্যু পর্যন্ত? খুব বেশি হলে আগামী এক বছর, দেড় বছর...আমার কথাগুলো বলতে খারাপ লাগছে। কারণ এই প্রশাসন আমারই প্রশাসন। আমাদেরই প্রশাসন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত প্রশাসন। তাদের সেই ভাবেই কাজ করা উচিত ছিল, চলা উচিত ছিল। বিএনপি চারদলীয় জোট যদি একবারে ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দিতে পারে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। আপনারা কী ১৪৪ও দিতে পারেন না? এতই আপনারা স্বচ্ছ হয়ে গেলেন? এত ট্রান্সপারেন্ট হয়ে গেলেন?’
তাঁর বিরুদ্ধে চাকরির জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ কেউ করতে পারবে না বলেও দাবি করেন লিটন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরো বলেন, ‘লিটনকে চাকরির জন্য টাকা দিতে হয়, এই অজুহাত তুলে চাকরি বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। কোনো যুক্তি নেই। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক জায়গা খালি হয়ে আছে। যেটা প্রতি বছর দুইশ আড়াইশ করে অবসরে যায়, তিন বছরে ছয়শর মতো হবে। এই ৬৫০ হোক বা ৫০০ হোক— এই শূন্য জায়গায় বেতনের জন্য আপনাকে ইউজিসিতে গিয়ে ধর্না দিতে হবে না। এগুলো স্যাংশন করা পদ। এখানে টাকা বরাদ্দ হয়। সেই টাকা দিয়ে আপনি বেতন দিতে পারেন আরামে। আপনি স্বাধীনতার পক্ষের দেড়শ, দুইশ, আড়াইশ ছেলেকে পার্শ্ববর্তী এলাকারসহ শহরের ওই প্রান্তের কিছু ছেলেকে কি চাকরি দেওয়া যায় না? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে কর্মচারী পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি, চতুর্থ শ্রেণি পর্যায়ে একেবারে দেখা যায় রাজাকার বা আলবদর, বিএনপির আদর্শে দীক্ষিত তাদের সংখ্যা অনেক ভারী। আমরা কি সেই সংখ্যা আরো ভারি করব? না আমাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এসে সেই সংখ্যা নামিয়ে দিয়ে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবো। কোনটা? আমি সেই কারণে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত আছে আমরা শান্ত রেখেছি বলে। আমাদের ছাত্রলীগ ভালো। আমাদের কথা শোনে। আমাদের ধমকে ভয় পায়। তাই পার্শ্ববর্তী নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এমন ঘটনা ঘটায় না যাতে আপনাদের অসুবিধা হয়। তবে অনুরোধ করে গেলাম। আমি চোখ রাঙাতে আসিনি। অনুরোধ করে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা যাঁরা আছেন, শীর্ষ দুই ব্যক্তিকে। আপনারা দয়া করে যাদের পিঠে পা দিয়ে ওই জায়গায় পৌঁছেছেন। আপনি আপনার যোগ্যতায় ভিসি হননি। প্রোভিসি হননি। আপনি আওয়ামী লীগ করেন বলে ভিসি, প্রোভিসি হয়েছেন। এই কথা ভুলে যাবেন না। যাদের পিঠে পা দিয়ে সিঁড়ি বানিয়ে আজকে ভিসি, প্রোভিসি হয়েছেন— দয়া করে আল্লাহর ওয়াস্তে সেটার প্রতিদান দিন। তা না হলে যখন সবকিছু হারিয়ে যাবে, রাস্তা দিয়ে চলাও কিন্তু কঠিন হয়ে যাবে আপনাদের জন্য। মানুষের ধিক্কার আপনাদের সহ্য করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত। এই কাজ করবেন না। ভাইয়েরা আমার, এই কথাগুলো তাদের কানে যাক। আমি চাই তারা শুনুক। শুনে তারা একটু স্থির লাইনে আসুক। যে না দেরি হয়েছে, আর দেরি করা ঠিক না। আমরা নিয়োগ দেই।’
জাতীয় চার নেতা বার বার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন উল্লেখ করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘দু-নলা এক-নলা বন্ধুক, তীর-ধনুক, লাঠিসোঁটা দিয়ে এ দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাসহ অন্য আঞ্চলিক নেতাদের কী যে ক্ষমতা তাদের আহ্বানে বাঙালিরা যুদ্ধ করে এবং দেশকে স্বাধীন করেছে।’
এ সময় কিছুদিন আগে রাজশাহী সফররত আওয়ামী লীগের একজন পূর্ণমন্ত্রীর সফরের প্রসঙ্গ টেনে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘এক অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাবলু সরকার (রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) গিয়ে বলে যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচশর বেশি পদ খালি আছে। তিনি শুনে চক্ষু আকাশে করে বলেন, ‘বলো কী? আমাদের আমলে পদ খালি? লোক নিয়োগ দিচ্ছে না? আর আমি আমার মন্ত্রণালয়ে একটি পদে ১০ জন নেওয়ার কথা, আমি ৪০ জনকে নিয়োগ দিয়ে রেখে দিয়েছি। যাতে কেউ ঢুকতে না পারে ভবিষ্যতে।’ আর আমরা খালি করে রাখছি। কেন? আমি যদি বলি আগামীতে যদি বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে তাদের জন্য কী? তারা এসে পটাপট চাকরি পেয়ে যাবে সেজন্য? এই যেন খালিটা না থাকে প্লিজ। আমরা যেন পূরণ করে দেই। কোনো জায়গা ফাঁকা রাখা যাবে না। কোনোভাবে আল্লাহ না করুক, কোনো কারণে যদি আমাদের সরকারকে যদি সরে যেতে হয় এই জায়গা কিন্তু একদিনে আবারও নিয়োগ দিয়ে বিএনপি জামায়াত পূরণ করে ফেলবে। জায়গা কখনো কারো জন্য খালি থাকে না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লবের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা প্রমুখ।
এ ছাড়া জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে রাবি ছাত্রলীগ।