রাজন হত্যায় কামরুলসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ড
সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় কামরুলসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একজনকে যাবজ্জীবন ও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে তিনজনকে।
আজ রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা এ রায় ঘোষণা করেন।
urgentPhoto
ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া চারজন হলেন মামলার প্রধান আসামি সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন শেখপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলাম, পীরপুর গ্রামের সাদিক আহমদ ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার, শেখপাড়া গ্রামের তাজ উদ্দিন বাদল ও সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে পাভেল। এর মধ্যে জাকির হোসেন ওরফে পাভেল বর্তমানে পলাতক।
আদালত জালালাবাদ থানাধীন পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নূর মিয়া ওরফে নূর আহমদকে যাবজ্জীবন, শেখপাড়া গ্রামের দুলাল আহমদকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। লাশ গুমের চেষ্টার দায়ে আসামি কামরুলের ভাই শেখপাড়া গ্রামের মুহিদুল ইসলাম মুহিত, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে সাত বছর করে এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জাহাঙ্গীরগাঁও গ্রামের আয়াজ আলীকে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসামি শামীম আহমদ পলাতক।
বেকসুর খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন জালালাবাদ থানাধীন হায়দরপুর গ্রামের রুহুল আমীন, কুমারগাঁও গ্রামের আজমত উল্লাহ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের ফিরোজ আলী।
মোট ৭৬ পৃষ্ঠার রায়ে ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনাসহ ৫৬ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ আদালত তুলে ধরেন। দেড় ঘণ্টা রায় পড়া শেষে চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে খালাস দিয়ে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এর আগে ১১ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়।
রাজনের বাবা-মা ও মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মফুর আলীসহ শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা গত ২৭ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন আজ নির্ধারণ করেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। ১ অক্টোবর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। এর আগে গত ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার।
রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘এ রায়ের মধ্য দিয়ে জাতি যে আশা করেছিল, দেশবাসী যে আশা করেছিল, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ যে আশা করেছিল সে আশার প্রতিফলন হয়েছে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘রায় সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আইনের বিধান আছে যদি কেউ সংক্ষুব্ধ থাকেন, তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ কারণে সম্পূর্ণ রায় পাওয়ার পর আসামিপক্ষ চিন্তা করবে উচ্চ আদালতে যাবে কি যাবে না। আমরা আশাবাদী, উচ্চ আদালতে আমরা যাব এবং আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এ সময় ঘাতকরা নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিওচিত্রে ধারণ করে, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
রাজনকে হত্যার পর সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়া মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে গত ১৫ অক্টোবর দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।