সাকা চৌধুরীর সনদ নিয়ে আদালতে যা হলো
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা রিভিউর শুনানিতে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন, তার মূল সার্টিফিকেট দিয়েছেন। কিন্তু এ সার্টিফিকেট ট্রাইব্যুনালে আপিলের শুনানিকালে জমা দেননি কেন? লন্ডন ও ওয়াশিংটন থেকে সার্টিফিকেট এনে জমা দিয়েছেন, কিন্তু পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মূল সার্টিফিকেট এতদিন আনতে পারেননি কেন?’
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘এখন যে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন, তাতে উল্লেখ রয়েছে গ্রেডিং সিস্টেমের। কিন্তু ওই সময় গ্রেডিং ছিল না এবং সেমিস্টারও ছিল না। অনার্স ছিল ইয়ারভিত্তিক।’
এস কে সিনহা আরো বলেন, ‘সার্টিফিকেট আনতে হলে ছাত্রকে সরাসরি আবেদন করে সার্টিফিকেট আনতে হয়। কিন্তু আপনারা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সার্টিফিকেট ওঠানোর জন্য যে আবেদন করেছেন, সে মর্মে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। সার্টিফিকেট আনতে হলে দূতাবাসের মাধ্যমে আনতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো সিল-স্বাক্ষর কিছু নেই। এ ছাড়া আপনাদের দেওয়া সার্টিফিকেটটি ইস্যু করা হয় ২০১২ সালে, যেটা সত্যায়িত করা হয় ২০১৫ সালে। ওই সময়ে যদি ইস্যু করা হয়, তবে আপিলের সময় জমা দিতে পারেননি কেন?’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে সার্টিফিকেট এনে জমা দিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সংসদে এবং প্রেসিডেন্ট নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা যদি কোনো সনদ দেন, এমনকি ওই দেশের প্রেসিডেন্টও যদি সনদ দেন, তবে এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে।’
এ সময় ওই সার্টিফিকেটের আরেকটি অসংলগ্নতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সার্টিফিকেটে ১৯০০ সালটি বড় আকারে লেখা থাকলেও ৭১ সংখ্যাটি ছোট করে লেখা আছে। এতে করে এটি যে জাল সার্টিফিকেট, তা বোঝা যায়। এসব বিবেচনায় বোঝা যায়, সার্টিফিকেটটি ভুয়া।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আপনারা একটি মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে আরো মিথ্যার জন্ম দিচ্ছেন। গঙ্গার জল বঙ্গোপসাগরে গড়াল।’
এ সময় সাকা চৌধুরীর বরাত দিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমি অভিযুক্ত, কিন্তু আমি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এটাই সত্য। কিন্তু আইনজীবীর দুর্বলতার কারণে ন্যায়বিচার বঞ্চিত হতে পারি না। আপনাদের সার্টিফিকেট নিয়ে সন্দেহ হলে দূতাবাসের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করতে পারেন।’
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সার্টিফিকেট নিয়ে জালিয়াতি করেছে। এখনো তাঁরা জাল সার্টিফিকেট নিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এসব আলোচনার পর রিভিউ আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেন আদালত।