আমার শ্রমিক-কর্মচারীরাই বিচ্ছিন্ন করেছে : নৌমন্ত্রী
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, সরকার নয়, তাঁর শ্রমিক কর্মচারীরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।
আজ শনিবার বিকেলে বাগেরহাটের মংলা-ঘাসিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌপথের খননকাজের উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘আমি মনে করি শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। শুধু পুলিশ-বিজিবি, আনসার বা র্যাবের দায়িত্ব নয়। গোটা দেশের মানুষ যেমন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। একইভাবে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন তীব্র আন্দোলন, জনগণের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেই কারণেই তো আপনারা গতকাল (শুক্রবার) দেখেছেন বাংলাদেশের শ্রমিক-কর্মচারী, পেশাজীবী, মুক্তিযোদ্ধারা একটা সমাবেশ করেছিলাম, আমরা বলেছিলাম এই অবরোধ প্রত্যাহার করেন। যদি প্রত্যাহার না করেন তাহলে আমরাই তো। শ্রমিকরা-কর্মচারীরা কোথায় কাজ করি? বিদ্যুতে কাজ করি, পানির সেক্টরে কাজ করি, গ্যাসে কাজ করি, টেলিফোনে কাজ করি। সব জায়গায় তো আমাদের কর্মচারী। সরকার কিন্তু এটা বন্ধ করে নাই। যেমন : বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমার শ্রমিক কর্মচারীরাই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এবং অন্য সবকিছু থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। কারণ এগুলো আমাদের শ্রমিক-কর্মচারী ওখানে থাকে। সরকারের এটাতে কিছু করার নাই। সরকার আমাদের কিছু বলে নাই। বাট ডেসা বলে নাই এটা বিচ্ছিন্ন করতে। আমরা নিজের দায়িত্বে, আমরা দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজটা করেছি। দেশকে বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। আর সেই কারণে এ ধরনের একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
নৌমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে আবারও অবরুদ্ধ করার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘শুধু তাই নয়, অবিলম্বে দেখবেন খালেদা জিয়াকে এমনভাবে ঘেরাও করা হবে, তাঁর খাবারও আমরা বন্ধ করে দেব। যাতে তাঁর খাবার নিয়ে কেউ ঢুকতে না পারে।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা যে খাবার নিয়ে যান টিফিন ক্যারিয়ারে করে, ওটা আমার শ্রমিক কর্মচারীরা জোর করে ছিনিয়ে তারা খাবে। খালেদা জিয়াকে খেতে দেবে না। এবং তাঁর জন্য আমরা সব পোড়া গাড়ি নিয়ে সব কিছু নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। খুব শিগগিরই আপনারা এটা দেখবেন। আজকে সন্ধ্যায়ই আমাদের একটা মিটিং আছে, এর পরই আপনারা এটা দেখবেন।’
এ সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, ‘নেওয়া হবে। সময় হলেই নেওয়া হবে।’
হরতাল বন্ধে ব্যবসায়ীদের দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘হরতাল হতে পারে, রাজনৈতিক বিষয় এটা। হরতাল অবরোধ আমরাও করেছি। কিন্তু কেউ কি কখনো বলতে পারবেন, ওই অবরোধ হরতালে সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সুতরাং এটা পরিষ্কার এটা কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে যেভাবে দমন করা দরকার, সেভাবেই দমন করা হবে। নিশ্চিত থাকেন।’
এর আগে দুপুরে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাটে ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শাজাহান খান বলেন, ‘শুধু বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগই বন্ধ নয়, প্রয়োজনে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী তাঁর জন্য খাবার নিয়ে যাবে, সেই খাবার ঘেরাওকারীরা ভাগ করে খাবে। এমন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে যে ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক-কর্মচারী, পেশাজীবী-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের এক সমাবেশে নৌপরিবহনমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে না খেয়ে মরতে হবে বলে হুমকি দেন। একই সঙ্গে তাঁর বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন। এর পরই শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে পুলিশ ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) লোক এসে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সকালে ওই কার্যালয়ের কেব্ল সংযোগ (ডিশ লাইন) বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এরপর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। দুপুরের পর কার্যালয়ের আশপাশের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।