‘ত্বকী হত্যায় র্যাবের কিছু কর্মকর্তা জড়িত’
নারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার সঙ্গে র্যাব ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। গতকাল বৃহস্পতিবার এনটিভির সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ দাবি করেন।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজলার মদনগঞ্জ সমক্ষেত্রে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘ত্বকী হত্যার ঘটনা একটি নারীঘটিত ঘটনা।’
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা চাইছি। আমি ইদানীংকালে বেশ কয়েকটি জনসভায় ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বলেছি যে আমরা প্রয়োজনে একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।’ তিনি বলেন, ‘আরেকটা কথা বলা হচ্ছে যে, র্যাব বলেছিল, একটা চার্জশিট দিতে যাচ্ছে। এটা আমি শুনি নাই অবশ্য। কিন্তু বলা হচ্ছে যে, বলেছিল। কিন্তু যখন র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেখেছেন, যারা এই মামলাটি তদন্ত করছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে আমি বলেছিলাম যে, সেভেন মার্ডার হওয়ার পরে যে দু-একজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, যারা ওপরের নির্দেশ না নিয়ে নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার ঘটিয়েছে। তখন কিন্তু নারায়ণগঞ্জের একজন করাপটেড মহিলা, যিনি অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে ফাইন্যান্সড; সংস্থা বলব না, দলের মাধ্যমে ফাইন্যান্সড; সে কিন্তু তখনো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। ঠিক একইভাবে ত্বকীর ঘটনা নিয়ে একই খেলা খেলছে এবং রাজনৈতিক কারণে। আমি দাবি করছি, প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক।’
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান দাবি করেন, ‘র্যাবের দুজন কর্মকর্তা, যে নারায়ণগঞ্জে ছিল ও পুলিশের একজন এএসপি (সহকারী পুলিশ সুপার) এবং মেজর আরিফসহ যারা ছিল, এ ঘটনার সাথে তারা জড়িত আছে। কারণ আমি জানি, বিপুল পরিমাণ টাকার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করার জন্য তাদের ব্যবহার করা হয়েছিল বলে আমার কাছে মনে হয়। তদন্ত হোক। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। দোষী হলে আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তি হবে।’ তিনি বলেন, ‘ঠিক সেভেন মার্ডারটা যেমন প্রমাণ হয়ে গেছে যে আমার কথা সত্য হয়েছে। এটাও প্রমাণ মনে হয় হবে যে, এ ঘটনার সাথে অন্য কিছু জড়িত আছে।’
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পেছনে ‘নারীঘটিত ঘটনা’ রয়েছে বলে দাবি করেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ সমক্ষেত্রে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি করেছিলেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী পাঠাগার থেকে বাসায় ফেরার পথে অপহৃত হয়। ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যার শাখা নদী থেকে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
ত্বকী হত্যার দুই বছর পূর্ণ হলো আজ শুক্রবার। এ দুই বছরেও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। ফলে বিচারকাজও শুরু হয়নি।
ওসমান পরিবার প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগপত্র দাখিলে বিলম্ব করছে বলে অভিযোগ করেছেন ত্বকীর বাবা নারায়ণগঞ্জের নাগরিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ‘ত্বকী হত্যার শুরুতে আমরা কিছু জানি না। শামীম ওসমান বলল, এটা কারা করেছে, আমরা জানি। তো, এই ঘটনা যেহেতু শামীম ওসমান ঘটিয়েছে, সে তো এটা জানবেই। তার অপকর্ম এখনো অব্যাহত আছে।’
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘পুলিশি তদন্তে ধীরগতির জন্য আমরা আদালতে আবেদন করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্তভার র্যাবকে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তদন্ত চলছে ধীরগতিতে।’
ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার কোনো সময় জানাতে পারেননি নারায়ণগঞ্জে কর্মরত র্যাব-১১-এর কমান্ডিং অফিসার আনোয়ার লতিফ খান। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময় বা এভাবে বলা যাবে না, এটা কবের মধ্যে শেষ হবে। কারণ, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তবে আমরা আশাবাদী। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা সুষ্ঠু কাজ সম্পন্ন করে একটা ভালো প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারব।’
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ তদন্ত শেষ করার পরেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি
ত্বকীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন। কর্মসূচির প্রথম দিন বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের চারুকলা ইনস্টিটিউট মাঠে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার সকালে ত্বকীর কবর জিয়ারত ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী র্যালির আয়োজন করা হয়। শনিবার ত্বকীকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের কর্মসূচি রয়েছে।