নিজামীর ফাঁসি আপিলেও বহাল
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগও।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
urgentPhoto
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ তাঁদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলে আদালত রায়ের জন্য আজ (৬ জানুয়ারি) দিন ধার্য করে দিয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জামায়াত নেতা। এ মামলায় গত ৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ তাঁদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছিল।
আজ সকাল ৯টা ৩ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন আদালত। ৯টা ১০ মিনিটের মধ্যেই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা আপিল বিভাগ।
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে আটটি, অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
প্রমাণিত চারটি, অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে আপিল বিভাগ আজ করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের (৪ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে খালাস দেয়। বাকি তিনটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
পাশাপাশি পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্রের (৩ নম্বর অভিযোগ) দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ এ দুটি অভিযোগ থেকেও তাঁকে খালাস দিয়েছেন।
তবে আপিল বিভাগ বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন।
নিজামীর মামলাটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে ষষ্ঠ আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় হলো। ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগে আসা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এর আগে পাঁচজনের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর গত বছরের ১১ এপ্রিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ২১ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।