গুরুদণ্ড দিয়েছেন আদালত : নিজামীর আইনজীবী
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী একাত্তরে মানবতাবিরোধী যে অপরাধ করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখাকে ‘গুরুদণ্ড’ বলে মনে করছেন তাঁর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তবে এ রায়ের রিভিউর ব্যাপারে নিজামীর সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আজ বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় বহাল রাখেন।
এর পরই এক সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সে সময় রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে কিছু সংখ্যক লোক পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাস করত। হয়তো সে কারণে তারা পাকিস্তান আর্মিকে সহযোগিতা করেছে। তার মানে এই নয় যে, তারা সরাসরি খুন, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। যারা সরাসরি জড়িত, সেসব সৈন্যের তালিকা আমরা দিয়েছিলাম।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আজ যাদের বিচার করা হচ্ছে, তারা প্রধান আসামি না, তারা সহযোগী আসামি। প্রধান আসামিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেখানে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী সহযোগী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া যায় না।’
‘যদি নিজামী সাহেব সহযোগী আসামি হনও, তাহলেও উনার বয়স, উনি একজন ইসলামী চিন্তাবিদ—এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে তাঁর সাজা কমানোর আবেদন করা হয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে, আমি অপরাধ স্বীকার করছি’, বলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
ন্যায়বিচার পেয়েছেন কি না এ বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এটা সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ। আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছি। আদালত যে রায় দিয়েছেন, আমরা আইনজীবী হিসেবে তা-ই মেনে নেব। আইনজীবী হিসেবে আমরা তা-ই পেয়েছি। সেটা আমার মক্কেলের বিষয়।’
আসামিপক্ষের এ আইনজীবী প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘৪০ বছর পর সাক্ষীদের সেফহোমে রেখে তাদের যা শেখানো হয়েছে, তারা তাই বলেছে। আগামী ইতিহাস বলবে তারা সত্য বলেছে, কি বলেনি।’
রিভিউ পিটিশনের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা তো আইনজীবী। এটি আমার ব্যক্তিগত বিষয় নয়। নিজামী সাহেব আমাদের যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দেবেন, আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নেব। তিনি রিভিউ করতে বললে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নেব।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ তাঁদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলে আদালত রায়ের জন্য আজ (৬ জানুয়ারি) দিন ধার্য করে দিয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।