ফেলানী হত্যার পাঁচ বছর, বিচার পায়নি পরিবার
আজ ৭ জানুয়ারি, ২০১১ সালের এই দিনে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানী। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ায় চার ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হয় ফেলানীর লাশ।
এ ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মৃত্যুর পাঁচ বছর হয়ে গেলেও ফেলানী হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার।
ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতে পরপর দুবার ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম সাক্ষী দিয়ে এলেও অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। পরে ন্যায়বিচারের আশায় ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম-এর (মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ) সহায়তায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করেন ফেলানীর বাবা। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারিত থাকলেও দিনের কার্যতালিকায় না থাকায় শুনানি হয়নি। ফলে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এখনো ঝুলে আছে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ।
কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ চার ঘণ্টা লাশ ঝুলে থাকার ছবি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচার হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নড়েচড়ে বসে ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ফলে ফেলানী হত্যার আড়াই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিশেষ আদালতে বিচারকাজ শুরু করে বিএসএফ। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন বিএসএফের আদালত। আবারো সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন একই আদালত। ২০১৪ সালের ২ জুলাই পুনরায় অমিয় ঘোষের বেকসুর খালাসের রায় বহাল রাখেন আদালত।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার না পেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মাসুমের সহযোগিতায় রিট আবেদন করেছি। ভারতের সর্বোচ্চ এ আদালতে ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে কাঁটাতারের বেড়ায় নির্মমভাবে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। আমি ভারতের উচ্চ আদালতে তার ফাঁসি চাই।’
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামের আইন সহায়তাকারী ও কুড়িগ্রাম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘কাঁটাতারে ফেলানী হত্যার পাঁচ বছর হয়ে গেছে। ন্যায়বিচার না পেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেছেন ফেলানীর বাবা। রিট আবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ থাকলেও বেঞ্চ পুনর্গঠনের কারণে আবারো পিছিয়ে গেছে বিচারিক কার্যক্রম। বিলম্ব হলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি।’