পেটের টান দূর হয়েছে, এখন প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশ কখনো ১২৩ ভাগ বেতন বাড়াতে পারে নাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করেছে। প্রত্যেকে দ্বিগুণের কাছাকাছি বেতন পেয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত আর নেই।’
‘তারপরও দেখি কেউ কেউ অসন্তোষ। তাদের অসন্তোষ যায় না। কেন অসন্তোষ এটা আমার কাছে বোধগম্য না। পেটে যখন খাবারের টান থাকে, তখন পেটের খাবারের কথা চিন্তা থাকে। সেই পেটের খাবারের চিন্তা আমরা দূর করে দিয়েছি বলে, এখন প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি- এটাই বাঙালির স্বভাব।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কোনো কিছুতেই বোধ হয় সুখী করা যায় না, এটাই বোধ হয় আমাদের দুর্ভাগ্য। যতই দেই, কিছু কিছু লোক কেন জানি সুখী হয় না। কেন হয় না সেটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তার বিষয়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। urgentPhoto
জনসভাস্থলে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে জনসভাস্থল পূর্ণ হয়ে যায় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের আমি বলব, ১২৩ ভাগ বেতন বাড়িয়ে দিয়েছি। যদি কোনো অসুবিধা আপনাদের হয়, সেটা তো আমরা দেখব, আমরা দেখছি। কিন্তু তাই বলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট করবেন না। ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা যদি বন্ধ করেন, ছাত্রছাত্রীরাও তা মেনে নিবে না। আমরা সরকারে আসার পর থেকে যানজট মুক্ত রাস্তাঘাট তেমনি সেশনজট মুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। কাজেই সে শিক্ষা যাতে সুষ্ঠু ভাবে চলে, আমরা সেটাই চাই। সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ শিক্ষকদের সম্মান অনেক উপরে। এখন একটা শিক্ষক যদি সচিবের মর্যাদা চায়, আমার কিছু বলার নাই। কারণ আমার শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান সাহেব, আমার শিক্ষক রফিক স্যার, তাঁরা তো আমার শিক্ষক, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও আমার শিক্ষক হিসেবে আমি তাঁদের সম্মান করি। সে মর্যাদাই তাঁরা পান, প্রফেসর হিসেবেই তাঁরা সম্মান পান। কাজেই সম্মানবোধটা কিছুটা নিজেদের ওপরও নির্ভর করে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে ওই সম্মান আদায় করার কথা বলা এটা একজন শিক্ষককে মানায় না। এটা একজন শিক্ষকের জন্য মোটেও সম্মানজনক না। তাঁদের সমস্যাটা কী, সেটা তো আমরা আলোচনা করছি। যার যার কর্মক্ষেত্র তার তার এখানে। আর যদি সচিবের মর্যাদাই লাগে, চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেরা সচিব হয়ে যান বা পিএসসিতে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন। তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন সচিব ৫৯ বছর পর্যন্ত চাকরি করে। আর আমি নিজে, শিক্ষকদের দাবিও করতে হয়নি, শিক্ষকদের চাকরির বয়স ৬৫ বছর করে দিয়েছি। তাহলে কি উনারা চান, উনাদের বয়স আবার ৫৯ বছরে চলে আসুক? সরকারি কর্মকর্তাদের মতো আবার ৫৯ এ নিয়ে আসতে হবে? সেটা তো না। উনারা তো ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করবেন, বেতন-ভাতা পাবেন। তুলনা করলে তো অনেক কথা বের হয়ে আসবে। আমি সেটা করতে চাই না। কারণ শিক্ষকরা তাঁর মর্যাদা নিয়ে থাকুক, সম্মান নিয়ে থাকুক সেটাই আমরা চাই। সমস্যা হলে সেটা আমরা দেখব। কিন্তু ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করতে পারবেন না। ইউনিভার্সিটিগুলো সচল রাখতে হবে।’
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময়ে ১৯টি ক্যু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময়ে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। উচ্চ আদালত সেই বিষয়ে রায় দিয়েছেন। ফলে উচ্চ আদালতের রায় মানলে জিয়াউর রহমানকে এখন আর রাষ্ট্রপতি হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে না। একইসঙ্গে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে যে দল গঠন করেছেন, সেই দলকে অবৈধ বলে গণ্য করা উচিত।
‘মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে ২২ হাজার লোককে বন্দী করা হয়। এর মধ্যে ১১ হাজারের সাজা হয়। সে সময় গোলাম আযম পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে সময় যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার ছিল না। সেই গোলাম আযমকে জিয়াউর রহমান দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। আর খালেদা জিয়া তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। ২০০৯ সালে এসে যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরু করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার পর অনেক মহল এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিন্তু কোনো মহলের ষড়যন্ত্রই সেই বিচারকাজ বন্ধ করতে পারবে না।
পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরেন। এই দিনটির স্মরণে রোববার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ওই দিন ইজতেমার আখেরি মোনাজাত থাকায় আজ জনসভা করেছে আওয়ামী লীগ।