১/১১ আগে এরশাদের বাসায় বৈঠক হয়েছিল
বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ১/১১-এর প্রেক্ষপট তৈরির আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের রাজধানীর বাসভবনে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছিলো বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ। তিনি ১/১১ কুশীলবদের বিচারের দাবিও জানান।
আজ সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সেনাবাহিনীর সাবেক এ কর্মকর্তা এ দাবি করেন। বিএনপিপন্থী সংগঠন স্বাধীনতা ফোরাম ‘১/১১-এর ষড়যন্ত্র ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় হান্নান শাহ ১/১১-এর প্রেক্ষাপট তৈরির ক্ষেত্রে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ক্যান্টমেন্টের বাসায় সাক্ষাতের স্মৃতিচারণা করেন তিনি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব ছিল সংবিধান অনুযায়ী তিন মাসের (৯০) মধ্যে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আওয়ামী লীগ এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়।
চরম সহিংস ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। বাংলাদেশে ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন ক্ষমতা গ্রহণ করে। সে সময় সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মঈন উ আহমেদ।
সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ হিসেবে সাধারণভাবে অভিহিত করা হয়। সেই সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের দিনটিকেই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘১/১১’ বা ‘ওয়ান-ইলাভেন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেই সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকে বন্দী করা হয়। ব্যবসায়ীরাও নানাভাবে সেই সরকারের মেয়াদে হয়রানি ও নির্যাতিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিতর্কিত ১/১১-এর আট বছর উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘যারা ১/১১ তৈরি করেছিল, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে- তাদের বিচার হতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিচার না করে বরং অনেককে পুরস্কৃত করেছে।’
১/১১-এর প্রেক্ষাপট তৈরি করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে এবং ‘মিথ্যা’ অপবাদ দিয়ে অনেক রাজনীতিবিদকে সমাজে হেয়-প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হান্নান শাহ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বলেন, বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল তখন সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, এ সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল।
‘আমি তখন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সেই সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু কেউ সে কথা কানে তুলেনি।’
১/১১ উপলক্ষে বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আজ হোক কাল হোক ১/১১-এর কুশীলবদের বিচার করতে হবে। এখানে বিএনপির নবীন যে নেতারা আছেন, আমি তাদের আহ্বান জানাব, আপনারা অবশ্যই তাদের বিচারের মুখোমুখি করবেন।’
১/১১-এর প্রেক্ষাপট তৈরির পেছনে একটি বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। তিনি বলেন, ‘সে সময় আমি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাসায় সাক্ষাৎ করেছিলাম। খালেদা জিয়া আমাকে বলেন, ডিজিএফআইয়ের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেছেন, দেশের মানুষ দলের লোকজন নাকি তাঁকে আর চায় না। আমি এর প্রতিবাদ করি। আমি বলেছিলাম, এটা শতভাগ মিথ্যা কথা।’
সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণা করে হান্নান শাহ বলেন, ‘খালেদা জিয়া সেদিন দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাঁর একপাশে সুটকেস তৈরি করা। দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি তাঁকে জিজ্ঞেসা করলাম, আপনার সিদ্ধান্ত কী? তিনি আমাকে বললেন, ৪৫ বছরের সংসার জীবন ছেড়ে কে যেতে চায়। আমি তখন তাঁকে বলি, আপনার বার্তা দেশবাসী ও দলের লোকদের আমি জানিয়ে দেই।’