যৌন ব্যবসার অভিযোগে আইন সহায়তা কেন্দ্রের নেতা গ্রেপ্তার
নিজ বাড়িতে যৌন ব্যবসা করানোর অভিযোগে আইন সহায়তা কেন্দ্রের মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি ফেরদৌস হোসেন বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের কাঁচাবাজার সংলগ্ন নারাঙ্গাই এলাকার বাসা থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় এক যৌনকর্মীকেও আটক করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে বাবুকে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
আইন সহায়তা কেন্দ্রের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে পরিচালক তছলিম সরকার সাংবাদিকদের জানান, আবু সাবাহ ফেরদৌস হোসেন বাবু তাঁদের সংগঠনের মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি। বাবু যদি কোনো অনৈতিক কাজ করে থাকেন তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠান দায়ী নয়।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান জানান, বাবুর বাসায় মিনি যৌনপল্লির খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যার দিকে ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের অভিযানকালে দৌড়াদৌড়ি করে বেশ কয়েকটি ঘর থেকে খদ্দের ও যৌনকর্মীরা পালিয়ে যায়। আটক করা হয় খালেদা খাতুন বন্যা নামের এক যৌনকর্মী এবং বাড়ির মালিক ফেরদৌস হোসেন বাবুকে।
পুলিশের হাতে আটক যৌনকর্মী খালেদা খাতুন বন্যা সাংবাদিকদের জানান, তিনি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ছিলেন। পাঁচ মাস ধরে বাবুর বাসায় এসেছেন। এখানে বাইরে থেকে খদ্দের এনে এই বাড়ির ২০-২৫টি ঘরে অনৈতিক কাজ চলে। এ ছাড়া এখানকার যৌনকর্মীরা ভাড়ায় বাইরে যান। বাড়ির মালিক বাবু ও তাঁর শ্যালক সোবহান সবকিছু তদারকি করেন। তাঁরা প্রতিটি যৌনকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পান।
বন্যা আরো জানান, বাবুর নেতৃত্বে এই বাড়িতে মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশার আসর বসে এবং ব্যবসা চলে। তিনি পুলিশের সামনেই বেশ কয়েকজন যৌনকর্মীর নাম বলেন।
এ ব্যাপারে আইন সহায়তা কেন্দ্রের নেতা বাবুর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।
নারাঙ্গাই এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই বাবু এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রতিবাদ করলেই তাঁর ভাড়াটে মেয়েদের দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। কথায় কথায় তিনি নিজেকে আইন সহায়তা কেন্দ্রের জেলা সভাপতি ও মানবাধিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নারী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, জমি নিয়ে বিরোধসহ বিভিন্ন মামলার বাদী-বিবাদীকে আইন সহায়তা কেন্দ্রের নামে নোটিশ করে বাবু ও তাঁর লোকজন চাঁদা আদায় করেন।
মানিকগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি লিয়াকত আলী খান লাবনের জমি-সংক্রান্ত একটি মামলায় নোটিশ দিয়েছিলেন বাবু। এমনকি বিচারের নামে অর্থনৈতিক লেনদেনের পাশাপাশি মারধরের ঘটনাও ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যৌন ব্যবসার অভিযোগে মামলা করে বাবুকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।